রাজধানীসহ সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে মানুষ হত্যার অভিযোগে পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) ৮৮ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর বাইরে আরো ১১ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে।
এসব মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন সাবেক তিন আইজিপি, সাবেক দুই ডিএমপি কমিশনার ও র্যাবের সাবেক দুই মহাপরিচালক। এ ছাড়া এসবি ও সিআইডির সাবেক প্রধানকে খুনের মামলার আসামি করা হয়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে ঢাকার আদালত ও থানায় এসব হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকালে নিরীহ ছাত্র-জনতাকে নির্বিচার যারা গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের প্রত্যেককে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এসব নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এর বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদমর্যাদার ছয়জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় আছেন ১১ জন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি)। এর বাইরে পুলিশ সুপার বা উপকমিশনার পদমর্যাদার ১৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা আছেন আসামির তালিকায়।
এ ছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বা অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) পদমর্যাদার আরও ১৬ জন কর্মকর্তা আসামির তালিকায় রয়েছেন। সহকারী পুলিশ সুপার বা সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার ৬ জন কর্মকর্তাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন থানায় কর্মরত সাবেক ১৩ জন ওসি, ৯ জন পুলিশ পরিদর্শক, ১৩ জন এসআই, ১ জন এএসআই ও ৩ জন পুলিশ কনস্টেবলকে আসামি করা হয়েছে।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর ১৩ আগস্ট থেকে একের পর এক মামলা হতে থাকে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টা, আইজিপি, সরকারি কর্মকর্তাসহ ২৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন দুজন সাবেক আইজিপি ও একজন পুলিশ পরিদর্শক।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৭৬০ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪১ জন এবং ৪ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ৪১৯ জন নিহত হন।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পর সর্বাধিক খুনের (৩৩টি) মামলার আসামি হয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে ১৮টি থানায় এসব হত্যা মামলা হয়েছে।২৭টি খুনের মামলার আসামি হয়েছেন ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
এ ছাড়া সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের বিরুদ্ধে সাতটি হত্যা মামলার তথ্য জানা গেছে। রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় ৩ সেপ্টেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন। তিনি আদালতে দাবি করেন, তিনি কোনো খুনের ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত নন।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় গত ১৯ আগস্ট একটি অপহরণ মামলা হয়েছে।
এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১১টি হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এর বাইরে র্যাবের সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া র্যাবের সাবেক প্রধান এম খুরশিদ হোসেনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে ছয়টি।
এ ছাড়া অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার লুৎফুল কবির ও জামিল আহমেদের বিরুদ্ধে একটি করে হত্যা মামলা হয়েছে। ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার এস এম মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে।
ডিএমপির সিটিটিসির সাবেক প্রধান মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া সিটিটিসির সাবেক যুগ্ম কমিশনার কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশের সাবেক ডিআইজি রিপন সরদারের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়াদ্দারের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।এ ছাড়া ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন সরদার, রশিদুল হক, সঞ্জিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে একটি করে হত্যা মামলা হয়েছে।
আ. দৈনিক / কাশেম