ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এই উত্তেজনা রাত গভীর হতে থাকলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার রূপ নেয়। এ সংঘর্ষে ইট-পাটকেল নিক্ষেপে দুপক্ষের অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
উত্তেজনার সূত্রপাত
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, উপ-উপাচার্য তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখাননি। এমনকি ২১ দিন আগে দেওয়া স্মারকলিপিও তিনি পড়েননি বলে দাবি করেন। উপ-উপাচার্যের এই আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তার বাসভবন ঘেরাও করতে যায়।
তবে জানা গেছে, সাত কলেজের ভর্তির আসন কমানোসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে বিকেলে শতাধিক শিক্ষার্থী ঢাবির প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের কার্যালয়ে যান। অধ্যাপক মামুন আহমেদ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুই-তিনজন প্রতিনিধিকে তার কার্যালয়ে আলোচনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তবে শিক্ষার্থীরা তার অনুরোধ উপেক্ষা করে সবাই একসঙ্গে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় অধ্যাপক মামুন তাদের সঙ্গে আর কথা বলেননি। পরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে অবরোধ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে উপ- উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করার উদ্যোগ গ্রহন করেন
এর প্রতিক্রিয়ায় ঢাবি শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত সংলগ্ন প্রবেশপথ মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
সংঘর্ষে আহতদের অবস্থা
দুই পক্ষের শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকলে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ৭ জন ঢাবির শিক্ষার্থী এবং বাকিরা সাত কলেজের শিক্ষার্থী। গুরুতর আহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাকিব নাকে ও মুখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহত ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শামীম, রিপন, ইমতিয়াজ, মনিরুল, ইসমাইল, সাগর ও মাহিনের নাম পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পদক্ষেপ
উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের কারণে ঢাবি প্রশাসন সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে।
ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব। সকল পক্ষকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করছি।"
এই সংঘর্ষের কারণে ঢাবি ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। উভয়পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপের প্রবণতা পরিস্থিতি আরও জটিল করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি।
আ. দৈ./সাধ