এখনো রাহুমুক্ত হয়নি ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড, ডেসকো। অভিযোগ উঠছে সাবেক সরকারের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর মদদে এখনো সক্রিয় একটি চক্র। তবে তারা আওয়ামী লেবাস খুলে এখন এঁটেছেন বৈষম্য বিরোধীদের লেবাস।
আনসার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার পর পোশাক শিল্পখাতে নাশকতা ছড়ানোর অপপ্রয়াশ চালানোর চেষ্টা ব্যহত করে আইন প্রয়োগকারীরা। এবার বিদ্যুৎখাতে অস্থিতিশীলতা ছড়াতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি অসাধু চক্র।
তথ্য প্রমাণ বলছে গত স্বৈরাচার সরকারের ব্যানারে ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর মদদে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড, ডেসকোর ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সংগঠণের নির্বাচন করে জয় লাভকারী একজন এখন লেবাস বদলে বনে গেছেন সংস্কারপন্থী। পাশপাশি মহানগর পুলিশের কমিশনার মাইনুল হোসেনের শ্যালক পরিচয় দিয়েও আছে বদলী হুমকীর বিনিময়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ।
তিনি আরো যোগ করেন, শোনা যাচ্ছে পাঁচ জনের তালিকা করে দুজনের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে চূড়ান্ত তালিকায় রাখছে তিন জনের নাম।
আরেক কর্মকর্তার অভিযোগ , আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অভিযুক্ত লেবাস বদলানো একেএম মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া সে সময় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সিনিয়রদের টপকে উপ সহকারী প্রকৌশলী থেকে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি নেন। একই পথে হেঁটেছে সিন্ডিকেটের মোহম্মদ রেজাউল করিম, জিসানুর রউফ ও মাফরুল সাদিক প্রিন্স (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব ও সাবেক মাগুরা ১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের চাচা তো ভাই) ।
পরে ২০২২ সালের নভেম্বরে মাফরুল সাদিক প্রিন্সের নেতৃত্বে এরা রীতি মতো আওয়ামী লীগের ছত্র ছায়ায় ডেসকো ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির নির্বাচন করে ভরাডুবির শিকার হন সাধারন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ব্যানারে নির্বাচন করাদের বিরুদ্ধে। ( সেসময় সাধারণ ডিপ্লোমা প্রকৌলীদের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয়াদের আওয়ামী লীগের নামে হুমকীর একটি ভিডিও ফুটেজ আছে এই প্রতিবেদকের হাতে।)
এদিকে আরেক অভিযোগ বলছে খোদ ডেসকোর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপণা পরিচালকের পদটি দখল করে রাখা ব্যক্তিটির পুরানো পরিচয় সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠণের এক সময়কার নেতা থাকার সুবাদে এই চক্র রীতিমতো তাকে নাকি ব্ল্যাকমেইল করে ইচ্ছে মাফিক বদলী ও বদলী রদ করে আসছেন।
সম্প্রতি একই ঘটনা ঘটে ডিপিডিসিতেও। তবে সেখানে বদলি বানিজ্যেও বিষয়টি খোদ জ্বালানি উপদেষ্টা নজরে আসলে রাতারাতি তা রদ করেন। কারন হঠাৎ এই বদলীর প্রভাব পরেছে পুরো বিতরন ব্যবস্থায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেসকোর এক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী জানান, যে লোক আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে দাবড়ে বেড়িয়েছে গত ১৫ বছর সে এখন ভোল পাল্টে (ডিএমপি কমিশনারের শ্যালক দাবি করে) নতুন নতুন তালিকা করছে বদলীর।
এদিকে বর্তমান সময়ে এই বদলীর তালিকার বেশির ভাগই সাধারণ কর্মকর্তা। তালিকার ৭ নং কর্মকর্তা আব্দুল আলীমে ছেলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, এখন তিনি ছেলের চিকিৎসা দেখভাল করবেন নাকি নিজের কর্মস্থল সামলাবেন নাকি আমাদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন?
বদলী হওয়া আরেক কর্মকর্তা শামীম আল মামুন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে প্রথম সারির দিকে ছিলেন, আন্দোলন চালাতে মানসিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে ছিলেন পুরোটা সময়। হঠাৎ এই বদলিকে নিয়তি মেনে নিয়েছেন। তবে অবাক হয়েছেন ভোল পাল্টে আগের সরকারের আমলের দাপুটেদের এই আমলে সংস্কারপন্থী বনে যাওয়ায়।
চক্রটি এরই মাঝে কাফরুলে ডেসকো বিতরণ কার্যলয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির কার্যালয়টি দখল করেছে বলেও অভিযোগ চলতি দায়িত্বে থাকা কমিটির। তবে তারা তটস্থ মহানগর পুলিশ প্রধানের শ্যালক পরিচয় দেয়া মোজাম্মেলের হুমকী ধামকীতে। তাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে এ নিয়ে কোন অভিযোগ বা মুখ খুলতে নারাজ তারা।
অভিযোগের বিষয়ে একেএম মোজাম্মেল হক ভূঁইয়াকে মুঠোফোনে ফোন করলে দেখা করে কথা বলবেন বলে জানালেও দুদিন পর মেয়ের অসুস্থতার অযুহাতে আর যোগাযোগ করেননি। আর একেবারেই ফোনে পাওয়া যায়নি মাফরুল সাদিক প্রিন্স, মোহম্মদ রেজাউল করিম ও জিসানুর রউফকে।
চলমান বদলীর বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা চালানো হয় ডেসকো’র ভারপ্রাপ্ত ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মির নাহিদ হোসেন (যুগ্ম-সচিব নির্বাহী)-এর সাথে। তবে ব্যস্ততার অযুহাতে এড়িয়ে যান তিনি।
এদিকে ডেসকোর সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের অভিযোগ এভাবে মানসিক চাপে থাকলে একদিকে যেমন প্রভাব পড়ছে মনে পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে বাড়ছে মনোযোগের ঘাটতি।