শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫,
৫ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার

শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
জাতীয়
চাকরিবিধির বিতর্কিত ধারা বাতিলসহ দুদক সংস্কারে ৪৭ সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Wednesday, 15 January, 2025, 6:48 PM  (ভিজিট : 44)

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারের প্রতিবেদনে বিতর্কিত চাকরিবিধির ধারা বাতিল, কমিশনের মেয়াদ ৫ বছরের স্থানে ৪ বছর, কমিশনের নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট গঠন এবং গুরুপূর্ণ পদে নিজস্ব লোকবল পদায়নসহ ৪৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দুদক সংস্কার কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ।

আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুদককে কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবনাসহ  ৪৭টি সুপারিশ সম্সবলিত প্রতিবেদন  প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে দাখিল করা হয়েছে। গত বছরের ৩ অক্টোবর ৮ সদস্যের দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনে সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় আঙ্গিকে ১১ দফা ও দুদক সংস্কারে ৩৬ দফাসহ সর্বমোট ৪৭ দফা সুপারিশসহ প্রতিবেদন তৈরি করেছে কমিশন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের চাকরি থেকে অপসারণ করারও সুপারিশ করা হয়েছে। দুদক সংস্কার কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

দুদকের চাকরির বর্তমান বিধিমালার ৫৪ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ না দর্শাইয়া কোনো কর্মচারীকে ৯০ দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা ৯০ দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’

সচিব পদ থেকে নিচের দিকের পদগুলোতে নিয়োগ পদায়নে দুদক আইনের বড় পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। যার মধ্যে সচিব নিয়োগ, মহাপরিচালক পদে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা থেকে ৬০ শতাংশ করা, পরিচালক পদে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা ৭৫ শতাংশ করা। সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের যে পূর্বানুমতির বিধান করা হয়েছিল সেটি পুরোপুরি বিলুপ্তি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

দুদক কমিশনের কাজের পরিধি বাড়াতে ৩৬ জেলা কার্যালয়ের পরিবর্তে প্রতিটি জেলায় দুদকের কার্যালয় চালু করতে হবে। এখন যে জেলা কার্যালয়গুলো আছে সেগুলোতে বিশেষ জজ আদালত স্থাপন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সব জেলায় বিস্তারের প্রস্তাব করা হয়েছে।দুদক আইনে, স্বাধীন প্রসিকিউশনের কথা বলা হয়েছে। তবে নানা সীমাবদ্ধতায় সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার দুই দশকে প্রসিকিউশনই গঠন করতে পারেনি।

সংস্কার কমিশন একটি দীর্ঘ পরিকল্পনা তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে, এতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ নিজস্ব কর্মীর মাধ্যমে প্রসিকিউশনের যাত্রা শুরু করবে। পরে ক্রমান্বয়ে তা বাড়িয়ে নিজস্ব প্রসিকিউশন টিম গঠন করা হবে।

এদিকে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাত্র অর্ধেক জনবল নিয়ে দুদক কাজ করছে। আমি ১/১১ সরকারের সময় আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলাম। স্থায়ী প্রসিকিউশন সৃষ্টি করতে বাংলাদেশ অ্যাটর্নি সার্ভিস ডাইরেক্টরি তৈরি করা হয়েছিল। আইনও তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সরকার এসে সেই অধ্যাদেশ নিয়ে কাজ করেনি। যার জন্য ওটা আঁতুড়েই বসে গেছে। ওটা আর কার্যকর হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ ও যোগ্য আইনজীবীদের এই কমিশনের স্থায়ী প্রসিকিউশনে নিয়ে আসা দরকার। তাদের আনতে হলে তো পারিতোষিক দিতে হবে। এর জন্য একটু সময় লাগবে।’ দুদককে ‘সাংবিধানিক’ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও তিন সদস্যের পরিবর্তে ‘পরিসর’ বাড়িয়ে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাঁচ সদস্যের কমিশনে একজন নারী সদস্য যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি দুদকের কাজের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে, বিচারিক ও আর্থিক খাতের মতো অভিজ্ঞদের যুক্ত করা এবং কমিশনের মেয়াদ পাঁচ থেকে কমিয়ে চার বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

কমিশন গঠনে যে দুদক আইনে সার্চ কমিটির কথা বলা রয়েছে সেটি পরিবর্তন করে ‘বাছাই এবং পর্যবেক্ষক কমিটি’ করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এই কমিটি কমিশন যাচাই-বাছাই করে দেবে। পাশাপাশি কমিশন কী কাজ করছে তা ছয় মাস পরপর পর্যবেক্ষণ করবে। এটার জন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিও প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

দুদক কমিশন গঠনে বিতর্কিত ‘সার্চ’ কমিটি ও দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনা এড়াতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বাদ দিয়ে তার পরে যিনি সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ, তিনি হবেন বাছাই কমিটির প্রধান। হাইকোর্টের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ একজন সদস্য হবেন। একজন থাকবেন প্রধান বিচারপতির নিযুক্ত, একজন যিনি বাংলাদেশের শাসন সম্পর্কে জানেন, মহা-হিসাব নিরীক্ষক, পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে একজন, সংসদ নেতা থেকে মনোনীত একজন সদস্য ও প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা থেকে মনোনীত একজন সদস্য।

‘দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেব স্বীকৃতি দিতে হবে। দুদক স্বাধীন ও কার্যকর হবে, এটা আমাদের চাওয়া। তাই বলে দুদকের স্বাধীনতা সীমাহীন নয়। আমরা একটি পরিপূর্ণ সংস্কার সুপারিশ তৈরি করেছি।’-দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজামান

কমিশন নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে নিয়োগ দেওয়ার একটি পদ্ধতিও সংস্কার কমিশনের সুপারিশে তুলে ধরা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ‘যোগ্যতা’ ও ‘শর্ত’ পূরণ সাপেক্ষে যে কেউ চাইলে কমিশনার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে কমিশন ‘বাছাই ও পর্যবেক্ষক’ কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেব স্বীকৃতি দিতে হবে। দুদক স্বাধীন ও কার্যকর হবে, এটা আমাদের চাওয়া। তাই বলে দুদকের স্বাধীনতা সীমাহীন নয়। আমরা একটি পরিপূর্ণ সংস্কার সুপারিশ তৈরি করেছি।’

দুদক সংস্কার কমিশন সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন দেবে তাতে দুদক ছাড়াও দুর্নীতি দমনে ভূমিকা রাখতে পারে এমন রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিষয়েও ১১ দফা সুপারিশসহ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে সংসদ, বিচার বিভাগ, প্রশাসন,বিভিন্ন কমিশন, রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ, এনজিও, গণমাধ্যমসহ অংশীজনদের বিষয়ে কৌশলপত্র রয়েছে। দুদক কমিশন গঠনের বিষয়টি এত দিন গোপন থাকলেও এবার তা সবার জন্য উন্মুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

এক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন তিনটি পদ্ধতির সুপারিশ করেছে, প্রথমটি হলো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ‘শর্ত পূরণ’ সাপেক্ষে যে কেউ চাইলে কমিশনার হতে আবেদন করতে পারবেন বা ইছা প্রকাশ করতে পারবেন। দ্বিতীয়টি হলো ‘বাছাই ও পর্যবেক্ষক’ কমিটি চাইলে বাছাই করে প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে পারে। তৃতীয়টি হলো কেউ কাউকে চাইলে মনোনীত করতে পারেন।

প্রত্যেক প্রার্থীর জীবন বৃত্তান্তের পাশাপাশি দুদক সম্পর্কে তার জানাশোনা, জ্ঞান ও চিন্তাভাবনা, দুদক সম্পর্কে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জেনে নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের তালিকা করা হবে। এভাবে যোগ্য ও মেধাবীদের তালিকাভুক্ত করে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে।

প্রাথমিক তালিকা থেকে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে তিনজন করে ১৫ জন বাছাই করবে কমিটি। পরে এই নামগুলো এক সপ্তাহের জন্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। এক সপ্তাহ পর সেই তালিকা থেকে ১০ জনকে বাছাই করা হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের তালিকা দেবে। এরপর সেই ১০ জনের নাম আর প্রকাশ করবে না। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নিয়োগ দেবেন।

কমিশন গঠনের পর বাছাই কমিটি দেখবে দুদক কী করলো। কোন মামলাগুলো কী কারণে নেওয়া হলো, কী কারণে নেওয়া হলো না। কমিশন ছয় মাস পর পর এই বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। এই পর্যালোচনাগুলো নিয়ে পরে গণশুনানি হবে।

গত বছরের ৫ আগস্টের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ২৯ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেন। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

১০ নভেম্বর দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ দিতে বাছাই কমিটি গঠন করে সরকার। পাঁচ সদস্যের এ কমিটির সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হক। গত ১০ ডিসেম্বর সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। একই দিন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদকে দুদক কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

আ. দৈ./ কাশেম
   বিষয়:   চাকরিবিধি   বিতর্কিত ধারা   বাতিল   দুদক   সংস্কার   ৪৭ সুপারিশ   কমিটি  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দুদকের মামলায় বিএফআইইউয়ের সেই মাসুদ বিশ্বাস গ্রেফতার
এনসিটিবি’র সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০০ জনের নামে মামলা
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেন যারা
বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চায় ভারত: জয়সওয়াল
বাংলাদেশে নিপীড়ন বন্ধে প্রয়োজন স্থায়ী সংস্কার: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পথে
ফরিদপুরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতারা গন সংযোগে ব্যস্ত
চায়না পোশাকে সয়লাব দেশ
দক্ষতা ও নিষ্টার পুরস্কার, দুদকের মহাপরিচালক-পরিচালক পদে পদোন্নতি
রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে: সালাউদ্দিন
জাতীয়- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : [email protected]
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝