শরণার্থীদের নিয়ে গল্প বলেছেন তরুণ নির্মাতা সুকর্ন সাহেদ ধীমান। ভিডিওতে সেই ছাপ রেখে তিনি প্রকাশ করেছেন ‘ফেউ’ নামের সিরিজের অ্যানাউন্সমেন্ট টিজার। ৩৬ সেকেন্ডের ওই টিজারে একজনকে বলতে শোনা যায়, "রিফিউজিগো দ্যাশ জাত বইলে কিছু আছে নাকি! আমরা তো মন্দিরের ঘণ্টার মত। যে বাজায় খালি বাইজে যাই।
টিজারে আর কোনো সংলাপ নেই; আছে মানুষের ধস্তাধস্তি, খুনের চেষ্টা আর আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার দৃশ্য। এছাড়া সঙ্গে উদযাপন, নৌকা, জঙ্গল ও হরিণের চড়ে বেড়ানোও বুঝিয়ে দেয় সুন্দরবনের গল্প আছে সিরিজে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পরগনা জেলা সংলগ্ন সুন্দরবনের মরিচঝাঁপির ‘গণহত্যার’ ইতিহাস নিয়ে ওয়েব সিরিজ ‘ফেউ’ বানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচারক ধীমান।
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেছেন শিগগিরই ‘ফেউ’ দেখা যাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে। চরকির ফেইসবুক পেইজে সিরিজের অ্যানাউন্সমেন্ট টিজার প্রকাশ করা হয়। এর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "কী ঘটেছিল ১৯৭৯ সালে? কী লুকানো হয়েছে আমাদের কাছ থেকে? চরকিতে আসছে সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত সিরিজ 'ফেউ'।"
ধীমান বলেন, "১৯৭৯ সালে জানুয়ারি থেকে মে মাসের মরিচঝাঁপি গণহত্যার ইতিহাসের কিছুটা তুলে ধরা হয়েছে। সাতচল্লিশের দেশভাগের ফলে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই দফায় বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ প্রাণে বাঁচতে আশ্রয় নেয় প্রতিবেশি দেশ ভারতে। আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিম্নবর্ণের কিছু মানুষ ঘাঁটি গাড়েন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবনের মরিচঝাঁপিতে। সরকারি আশ্বাসে সেখানে আবাস গোড়ে তোলেন তারা। এর মধ্যে ১৯৭৯ সালে সেখানে ভোটের আগের রাজনীতি রূপ পাল্টায়। শুরু হয় উদ্বাস্তু উচ্ছেদে নানা ঘটনা।
“শরণার্থী উচ্ছেদ করতে মরিচঝাঁপিতে খাবার ও পানি বন্ধ করে দেয়া হয়, ঘরে আগুন দেয়া, নৌকা ডুবানোসহ নির্বিচারে মানুষ হত্যার ঘটনাও ঘটে। তৎকালীন রাজ্য সরকার ১৯৭৯ সালের ১৬ মে মরিচঝাঁপিকে উদ্বাস্তু শূন্য করতে সক্ষম হন। সরকারি হিসেবে, সেখান মোট নিহতের সংখ্যা মাত্র দুই জন হলেও বিভিন্ন বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায়।”
এই ইতিহাসের অনুপ্রেরণায় ‘ফেউ’ বানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধীমান। ধীমান জানিয়েছেন, তিনি ২০১৬ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর ধরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা সংলগ্ন সুন্দরবন অঞ্চলের রাজনীতির গল্প ও তথ্য সংগ্রহ করেছেন। আর সিরিজ তৈরিতে সময় নিয়েছেন আট মাস।
"২০২২ সালের ডিসেম্বরে গল্পটা লক করি। চিত্রনাট্যের ১৭টা ড্রাফট করার পর আমরা কাজ শুরু করতে পেরেছি। সিরিজে মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ড কতটা এসেছে সে বিষয়ে পরিচালকের ভাষ্য, আমরা একটা সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বন করেছি, অনুপ্রেরণা নিয়েছি। রাজনীতি এই সিরিজের মূল কেন্দ্র।
২০২৩ সালের নভেম্বরে খুলনার মোংলায় শুটিং শুরু হয় ‘ফেউ’র; যা শেষ হয় গেল বছরের জুলাইয়ে। 'ফেউ’র প্রেক্ষাপট ইতিহাস নির্ভর হলেও সিরিজটি ফিকশনাল; গল্প লিখেছেন নির্মাতা ধীমান ও রোমেল রহমান। চিত্রনাট্য করেছেন ধীমান ও সিদ্দিক আহমেদ।
এর আগে নির্মাতা জানিয়েছিলেন, সিরিজের প্রথম সিজনে থাকছে সাতটি পর্ব; আর দ্বিতীয়টিতে পাঁচটি পর্ব রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দুই সিজন প্রচারের মধ্যে ব্যবধান থাকবে কয়েক মাস।
‘ফেউ’ সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ তিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, তারিক আনাম খান এবং মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। আরও অভিনয় করেছেন তানভির অপূর্ব, হোসেইন জীবন, তাহামিনা অথৈ। তাছাড়া খুলনার অনেক স্থানীয় শিল্পীও কাজ করেছেন এই সিরিজে।
আ. দৈ/ সাম্য/এমআই