৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেজেটভুক্ত হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে প্রথম গেজেটে থাকা ২২২ জনকে দ্বিতীয় গেজেটে বাদ দেওয়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বাদ পড়াদের মধ্যে ১৬৮ জন নতুন গেজেটে বাদ পড়েছেন, যাদের মধ্যে ৭১ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ১৫ অক্টোবর প্রথম গেজেটে ২০৬৪ জন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। সেখানে ৯৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৪৫ জন স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশ নেননি এবং ৫৪ জনকে সরকারের সিদ্ধান্তে বাদ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে দ্বিতীয় গেজেটে আরও ১৬৮ জন বাদ দেওয়া হয়। ফলে প্রথম গেজেটে থাকা ২২২ জন প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বাদ পড়া প্রার্থীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তারা গেজেটভুক্ত হওয়ার পর পুরোনো চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং এ ঘটনায় তাদের পরিবারসহ তারাও চরম বিপর্যস্ত।
বাদ পড়াদের অভিমত
ঝিনাইদহের শৈলকূপার মেয়ে নাসরিন সুলতানা, যিনি প্রথম গেজেটে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ছিলেন, জানান, তার পরিবারের কেউ পড়ালেখা জানেন না। প্রচুর কষ্ট করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি বিসিএস চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য আগের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন তার পরিবার ভেঙে পড়েছে।
একজন কাস্টমস ক্যাডারের প্রার্থী, যিনি বুয়েট থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং অলিম্পিয়াড চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, হতাশ কণ্ঠে জানান, ‘আমি কখনো রাজনীতি করিনি। কোনো আইন ভঙ্গ করিনি। তবু কেন বাদ দেওয়া হলো, জানি না।’
বরিশাল, গাইবান্ধা এবং অন্যান্য জেলার বেশ কয়েকজন বাদ পড়া প্রার্থীও তাদের ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও শারমিন আহমেদ মনে করেন, এভাবে গেজেটভুক্ত প্রার্থীদের বাদ দেওয়া অন্যায় এবং এটি আইনের শাসনের ওপর আঘাত। তারা বলেন, যদি কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপরাধ বা নিয়মভঙ্গের অভিযোগ থাকে, তবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
এ ধরনের সিদ্ধান্ত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হতাশা তৈরি করবে এবং সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অনাস্থা বাড়াবে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
৪৩তম বিসিএসের পরিসংখ্যান
৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর চূড়ান্তভাবে ২৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু প্রথম গেজেটে ২০৬৪ জন এবং দ্বিতীয় গেজেটে ১৮৯৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় মোট ২২২ জন উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
এখনও পর্যন্ত বাদ দেওয়ার কারণ নিয়ে সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
আ. দৈ./ সাধ