বড়দিনের আগের দিন সূর্যের ‘স্বাদ’ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে নাসা। এখন পর্যন্ত মানুষের তৈরি যে কোনো বস্তুর চেয়ে সূর্যের কাছাকাছি উড়ে যেতে চলেছে নাসার সোলার প্রোব।
আগামীকাল মঙ্গলবার সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছাবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘পার্কার সোলার প্রোব’, যা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটতে চলেছে।
ছোট গাড়ির আকারের এই মহাকাশযানটি আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে সূর্য পৃষ্ঠের ৩৮ লাখ ৬০ হাজার মাইলের মধ্যে ঢুকে যাবে। নাসা বলেছে, ঘণ্টায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মাইল বেগে সূর্য পৃষ্ঠের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এটি। সোলার প্রোবটি পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের ৯৬ শতাংশের মতো পথ অতিক্রম করবে, বলেছেন নাসা’র হেলিওফিজিক্স বিভাগের প্রোগ্রাম সায়েন্টিস্ট কেলি কোরেক।
এ অভিযান চলাকালীন প্রোবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না নাসা’র মিশন নিয়ন্ত্রকরা। তাই মহাকাশযানটি প্রথমবারের মতো সূর্যের এতো কাছে গিয়ে গলে গেছে না কি টিকে আছে এমন সংকেত পেতে প্রায় তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে নাসাকে। সংস্থাটি বলেছে, টিকে গেলে প্রথমবারের মতো সূর্যের খুব কাছে গিয়ে তোলা বিভিন্ন ছবি সম্ভবত জানুয়ারির কোনো এক সময় পৃথিবীতে পাঠাবে প্রোবটি।
কোরেক বলেছেন, সূর্যের কাছাকাছি চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে সৌর প্লাজমার ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে উড়ে যাবে পার্কার সোলার প্রোব। এমনকি সূর্যের সক্রিয় অঞ্চলের মধ্যেও ঢুকে যেতে পারে এটি।
সূর্যের বায়ুমণ্ডলের বাইরের অংশ ‘করোনা’ নামে পরিচিত। সূর্যের এই অনেক উত্তপ্ত অঞ্চল অর্থাৎ করোনা নিয়ে গবেষণা করার জন্য এ মিশনটি ডিজাইন করেছে নাসা। করোনা’কে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। কারণ সূর্যের বায়ুমণ্ডলের বাইরের স্তর কেন তারা’র পৃষ্ঠের চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি উত্তপ্ত তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধাঁধার মধ্যে রয়েছেন তারা।
করোনা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সূর্যের পৃষ্ঠে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ঝড় কীভাবে মহাকাশে বিস্ফোরিত হয় তা গবেষণায় এই মিশন সহায়তা করবে গবেষকদের। যেমন– সর্বোচ্চ শক্তির বিভিন্ন সৌর কণার প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হবে প্রোবটি। সূর্য থেকে বেরিয়ে এসে এসব সৌর কণা মহাবিশ্বে বিস্ফোরিত হয় সুপারসনিক গতিতে। মহাকাশের আবহাওয়ার জন্মস্থান এটি, বলেছেন কোরেক।
এতদিন আমরা আমরা দূর থেকে মহাকাশের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করেছি। কিন্তু এখন পার্কার প্রোব এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মহাকাশের আবহাওয়া কীভাবে তৈরি হয় তা এখন আরও ভালভাবে বুঝতে পারব আমরা। একইসঙ্গে টেলিস্কোপে দেখা সূর্যের ঝড় দেখে আমরা বলতে পারব পৃথিবীর ওপর এটি কেমন প্রভাব ফেলবে।
মহাকাশে চরম আবহাওয়ার সময় সূর্য সরাসরি পৃথিবীতে সৌর শিখা ও চার্জওয়ালা কণার প্রবাহ বয়ে আনতে পারে, যা সৌর বায়ু হিসাবে পরিচিত। সূর্যের এসব সৌরশিখা যখন পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন তা এর আশপাশে থাকা বিভিন্ন স্যাটেলাইটের ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে পৃথিবীতে বিদ্যুতের বিভিন্ন গ্রিডেও এর প্রভাব পড়ে ও কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে।
কোরেক বলেছেন, গবেষকদের মহাকাশের আবহাওয়া ও এর পরিণতির পূর্বাভাস দিতে সহায়তা করবে পার্কার সোলার প্রোব মিশন। বিশেষ করে আবহাওয়াবিদ ও বায়ুমণ্ডল নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীরা, যারা পৃথিবীর আবহাওয়া নিয়ে কাজ করেন তাদের জন্য।
২০১৮ সালে এই সোলার প্রোবটিকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে নাসা। তারপর থেকে সূর্যকে ২০ বারেরও বেশি প্রদক্ষিণ করেছে এটি। এই মহাকাশযানটির নাম রাখা হয়েছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো’র অগ্রগামী জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ইউজিন পার্কারের নামে। প্রথম সৌর বায়ুর অস্তিত্বের তত্ত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ২০২২ সালে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান পার্কার।
আ.দৈ/ সাম্য