পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেনি বাাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। পদোন্নতির ক্ষেত্রে তিন বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) থাকতে হবে। তারপরে তাদের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) যাচাই-বাছাই করে পদোন্নতিতে ডাকা হয়। কিন্তু কৃষি ব্যাংক সেসব নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে ৫১ জনকে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পদে পদোন্নতি দিয়েছে। অনিয়মভাবে যাদের পদোন্নতি হয়েছে। এরমধ্যে এদের মধ্যে থেকে জিএমপদে পদে ৩০ জনের মতো ভাইবা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, অনিয়মের মাধ্যমে কৃষি ব্যাংকের এই পদোন্নতিতে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের একটা বৈষম্য তৈরি হবে। অনিয়মভাবে যারা পদোন্নতি পেয়েছে, তারাই আবার ব্যাংকিংখাতে সবার আগে বড় পদে পদোন্নতি হবে। ফলে অযোগ্যরা যোগ্যদের জায়গা দখল করে নিবে। প্রকৃত লোক আর্থিকখাতে আসতে পারবে না। এই লোকগুলো আর্থিকখাতে যখন বড় পদে থাকবে, তখন তারা দুর্নীতিতে লিপ্ত হবে। আর্থিকখাতে অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়বে। এসব কারণে যোগ্য লোকগুলো পিছনে পড়ে আছে। তাই এদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আত্ততায় আনা উচিত বলে মনে করে তারা।
কৃষি ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই পদোন্নতির সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব ছিলেন মোঃ আলী হোসেন প্রধানিয়া। তিনি মূলত নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না এই পদোন্নতির দিয়েছে। এভাবে কোনভাবে পদোন্নতি দেয়া যায় না। এছাড়া পদোন্নতির ক্ষেত্রে অর্থের লেনদেন হয়েছিলো বলে অভিযোগ করেছিলেন তখন পদবঞ্চিতরা।
জানা যায়, কৃষি ব্যাংকে ২০১৭ সালে ১৪৬ জনকে সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এদের মধ্যে থেকেই আবার ২০২০ সালে ৫১ জনকে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এদের কারোই তখন তিন বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) নেয়া হয়নি। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে সালে যাদের পদোন্নতি হয়েছে। ঠিক তাদের আবার পদোন্নতি ক্ষেত্রে ডাকা হবে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সালের পরে। কিন্তু তাদের পদোন্নতি ক্ষেত্রে ডাকা হয়েছে ২৭ নভেম্বর ২০২০ সালে। ২ মাস তিনদিন আগে তাদের ভাইবা নেয়া হয়েছে। যেখানে কোন ভাবেই তিন বছরের আগে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন নেয়া সম্ভব না।
একটি সরকারি ব্যাংকের মহাব্যস্থাপক (জিএম) নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, তিন বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) হাতে পাওয়ার পর পদোন্নতি ক্ষেত্রে তাদেরকে ডাকাতে পারে। তার আগে পদোন্নতি দিতে পারে না, দিলে সেটা হবে অনিয়ম। এই অনিয়ম কারণেই প্রকতৃ যোগ্য লোকরা আর্থিকখাতে আসতে পারে না। ফলে আর্থিকখাতও উন্নতি হয় না।
এব্যাপারে সরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, তিন বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) ছাড়া পদোন্নতি দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে আলাদা একটি বোর্ড গঠন করতে হয়। সেই বোর্ডে এগুলো পাস করে আবার মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। এসব পদোন্নতির ক্ষেত্রে বেশি ভাগই নিজেদেও লোকদেরকে পদোন্নতি দেয়া হয়ে থাকে। সেখানে কিছুটা অনিয়ম হয়ে থাকে। এখানে যেটা হয়েছে। এভাবে দেয়া ঠিক হয়নি। তিনি আরোও বলেন, তিনি যখন অন্য একটি ব্যাংকের ডিএমডি ছিলেন, তখন সেই ব্যাংককেও অনিয়মভাবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এই ব্যাংকটিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পুরো নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করা হচ্ছে। সেখানে কোন প্রকার অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে।
এব্যাপারে কৃষি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোন প্রকার অনিয়ম হয়নি। নিয়ম-নীতি মেনেই সকল প্রকার কাজ করা হয়েছে।’
তবে এই ৫১ জনের পদোন্নতির সঠিক নিয়েমে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন সঠিক মনে নেই, কবে এই পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোন প্রকার অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়নি।’
আ. দৈ. /কাশেম/রমজান আলী