ভারতে ২০১৮ সালে দুই ভাই নমেন গুপ্ত ও ভিপুল গুপ্ত সিগারেটের বাঁট রিসাইকেল করার চিন্তা শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও, তাঁদের উদ্যোগ আজ বড় আকারে গড়ে উঠেছে এবং তারা এই জন্য একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ভারতে ফেলে দেওয়া সিগারেটের বাঁট থেকে খেলনা, বালিশসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে প্রশংসিত হচ্ছেন দুই তরুণ উদ্যোক্তা। এজন্য তাঁরা কোড ইফোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছেন, যার কারখানা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে নয়ডাতে অবস্থিত। কোম্পানির উদ্যোক্তারা জানান, এই উদ্যোগের মাধ্যমে তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি ছাড়াও পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করছেন।
উদ্যোক্তা নমেন গুপ্ত বলেন, আমরা শুরুতে প্রতিদিন ১০ গ্রাম তুলা (ফাইবার) ব্যবহার করতাম। এখন আমরা দৈনিক ১ হাজার কেজি তুলা সংগ্রহ করছি। এইভাবে বছরে লাখ লাখ সিগারেটের বাঁট রিসাইকেল করতে পারছি।
প্রথমে, তাঁরা শহরের বিভিন্ন সড়ক থেকে সিগারেটের বাঁট সংগ্রহ করেন। এরপর, এই বাঁট থেকে ফাইবার বা তুলা আলাদা করে জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে, এই প্রক্রিয়াজাত তুলা থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়। কোড ইফোর্টের প্রতিষ্ঠাতা নমেন বলেন, একটি সিগারেটের বাঁটে তিনটি উপাদান থাকে – ফাইবার, কাগজ এবং তামাক। আমরা এই তিনটি অংশই পুনর্ব্যবহার করি।
এখন পর্যন্ত, ৩০ কোটিরও বেশি সিগারেটের বাঁট রাস্তা থেকে সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে। এসব বাঁট দিয়ে নরম খেলনা, বালিশ, স্টেশনারি পণ্য, বাড়ির সাজসজ্জার সামগ্রীসহ আরও অনেক পণ্য তৈরি করছেন তাঁরা।
এছাড়া, সিগারেটের বাঁটের বাইরের কাগজ ও তামাক আলাদা করে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা হয়, যা থেকে তৈরি করা হয় কাগজ ও কম্পোস্ট পাউডার। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁরা ডায়েরি, নোটপ্যাড, খাম প্রভৃতি তৈরি করতে শুরু করেছেন। ২০২৬ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৩,৫০০ কোটি সিগারেটের বাঁট পুনর্ব্যবহার করার লক্ষ্যে কাজ করছেন নমেন গুপ্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানায়, ভারতে প্রায় ২৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে। এর ফলে প্রতিদিন রাস্তায় কয়েক কোটি সিগারেটের বাঁট পড়ে, যা পরিবেশদূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই উদ্যোগটি পরিবেশের সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে, এবং দুই ভাইয়ের কাজ সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিচালিত হচ্ছে।
আ. দৈ/ আফরোজা