দরপত্রের আইন অমান্য করে বরেন্দ্র কন্সট্রাকশন লিমিটেডকে দীর্ঘ ৮মাস পর কাজ শুরু করায় তা নির্দিষ্ট সময়ে সমাপ্ত না হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। সর্বশেষ ২৮দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বাতিল না করে মাত্র চার মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়ায় এ কাজ নিয়ে জেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, সদর উপজেলার বনবাড়িয়া আরএইচডি থেকে কান্দাপাড়া হাট পর্যন্ত ২৫শ ৮০ মিটার কাজের দরপত্রের আহ্বান করা হয়। দরপত্রে ৬জন অংশ নিলেও ১০ শতাংশ বার পদ্ধতি অবলম্বন করে কাজ পান বরেন্দ্র কনষ্ট্রাকশন লিমিটেড। যা এপ্রিল মাসে ৪কোটি ২৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়। এতে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ করার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়। আইনি জটিলতায় বরেন্দ্র কন্সট্রাকশন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কয়েক দফায় আটকে গেলেও এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলীদের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন জেলায় একক আধিপত্য বিস্তার করে এরই মধ্যে প্রায় শতাধিক কাজ ভাগিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপরেও জেলায় আরও বেশ কিছু কাজের কার্যাদেশ প্রক্রিয়া চলমান আছে বলে জানা যায়।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার জানান, ওই কাজটি গত ৫ মাস আগে বাতিলের জন্য চিঠি প্রদান করেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। এরপরেও কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে কাজ পেয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সিরাজগঞ্জে টেন্ডার দিলেই কাজ পেয়ে থাকে তাঁরা। তিনি আরও জানান, ১০ শতাংশ কাজের রেট কেবলমাত্র থাকে নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর ও প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে। এদের সহায়তায় রেট নিয়ে ইচ্ছামতো দরপত্র আয়ত্ত্বে নিয়ে নেন বরেন্দ্র প্রতিষ্ঠানটি। যে দিন থেকে সিরাজগঞ্জ এলজিইডিতে অংশ নেয়, সে দিন থেকে জেলার স্থানীয় ঠিকাদাররা আর কাজ পায় না, বিপুল অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় ঠিকাদারদের নিকট কাজগুলো হস্তান্তর করে থাকে। যে কাজগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট শংঙ্কা।
সরজমিনে গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, রাস্তায় কিছু অংশে বেকো মেশিন দিয়ে গর্ত করে চলছে।এসময় রিকশা চালক জব্বারের সাথে কথা বলে জানা যায়, চার-পাঁচ দিন ধরে রাস্তার পাশে মাটি কাটা শুরু করেছে। রাস্তার এ কাজে নানা অনিয়ম থাকায় এ পর্যন্ত কাজ শুরু করেনি বলে তিনি জানান।
বরেন্দ্র কন্সট্রাকশন প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী খোকন মির্জার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের লক্ষ্য কাজ বাস্তবায়ন করা। এই সময়ের মধ্যে শেষ না হলে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হবে। সর্বশেষ ২৮ দিন কাজ শুরুর চিঠি দেবার বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন এটি একটি বাস্তবায়নের কৌশল ছিল। কাজ না করায় বারবার চিঠি প্রেরণ ও সর্বশেষ বাতিলের চিঠি দেবার পরেও ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ধরে রেখে ৮মাস পর কাজ করানোর বিষয়ে তিনি বলেন কাজ শুরু করেছে এটিই বড় বিষয়।
রাজশাহী ওয়েডিনিং প্রকল্পের পরিচালক বারেক মন্ডল বলেন, ওয়েডিনিং কাজ করতে সময় লাগে না। কাজ ধরাটাই মূল বিষয়। আমাদের টার্গেট জুন মাসেই কাজ শেষ হবে। সারাদেশে কাজ পাওয়া এবং এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি নমনীয় মনোভাবের কারণ জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
এবিষয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণের সাথে মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে কলটি কেটে দেন। পরে ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ঠিকাদারকে না জানিয়েই কাজ বাতিল, এলজিইডির কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় গত বছর ২৭ কোটি টাকা উন্নয়ন বঞ্চিত হয় সিরাজগঞ্জবাসী। এছাড়া খাল খননে মৃত ব্যক্তির নামে স্বাক্ষর ও ভুয়া মাষ্টার রোল বানিয়ে কয়েক কোটি টাকা উত্তোলন, জেলার একাধিক রাস্তায় নিম্নমানের কাজ, নিম্নমানের কাজ করেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন ছাড়াই কোটি কোটি টাকার বিল প্রদান, তাড়াশ বারুহাস ও তাড়াশ কুন্দইল রাস্তায় ১২ কোটি টাকার কাজের অনিয়মের প্রমাণ পায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া কাজ না করেই বিল উঠানো,দরপত্র ছাড়াই কাজ বাস্তবায়ন,ডিজিটাল দরপত্রে কারচুপি নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এলজিইডি। যার কারণে প্রকাশ্যে অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন এলজিইডির কর্মকর্তারা।