গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় থাকা ‘মেগাথার্স্ট’ ফল্ট থেকে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। দেশি-বিদেশি ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা এই ঝুঁকিকে গভীরভাবে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে অনুষ্ঠিত ‘আর্থকুয়েক অ্যাওয়ারনেস, সেফটি প্রটোকল অ্যান্ড ইমার্জেন্সি প্রিপারেডনেস’ শীর্ষক সেমিনারে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
সেমিনার আয়োজন করেছে জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড। এতে দেশের পাশাপাশি জাপানের ভূমিকম্প-সহনশীল স্থাপত্য বিশেষজ্ঞরা অংশ নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ উপস্থাপন করেছেন। বক্তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের তিনটি সক্রিয় টেকটোনিক প্লেট-ভারত, মিয়ানমার ও ইউরেশীয় প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। বিশেষত সিলেটের ডাউকি ফল্ট, চট্টগ্রাম-টেকনাফের চিটাগং-আরাকান ফল্ট এবং মিয়ানমারের সাগাইং ফল্ট দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকিকে অত্যন্ত উচ্চ মাত্রায় নিয়ে গেছে।
সেমিনারে বলা হয়, গত এক শতাব্দীতে বাংলাদেশে ২০০টির বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে। ২০২৪ সালের পর কম্পনের হার আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সাবডাকশন জোনে সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সঞ্চিত শক্তি এখনও মুক্ত হয়নি, যা ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সতর্ক সংকেত।
জাপানের দুই বিশেষজ্ঞ কেসিরো সাকো ও হেসাইয়ে সুগিয়ামা বলেন, ভূমিকম্প-পরবর্তী অভিজ্ঞতা থেকে নিরাপদ অবকাঠামো নকশা, আধুনিক টেকসই নির্মাণমান ও শক্তিশালী জরুরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য। তারা ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনের স্ট্রাকচারাল অডিট, প্রাথমিক সতর্কবার্তা, জরুরি উদ্ধার সক্ষমতা ও নাগরিক সচেতনতা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, “ঢাকায় সম্প্রতি অনুভূত ভূমিকম্প দেশের ঝুঁকি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। দ্রুত নগরায়ন, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং দুর্বল ভবন কাঠামোর কারণে বড় কোনো ভূমিকম্প হলে বিপর্যয় ভয়াবহ হতে পারে। সচেতনতা, প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।”
সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন খ্যাতিমান প্রকৌশলী প্রফেসর ড. এম শামীম জেড বসুনিয়া, প্রফেসর ড. সৈয়দ ফখরুল আমিন (বুয়েট), রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদুজ্জামান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল হোসেন চৌধুরী রিজভী, প্রফেসর ড. রাকিব আহসান (বুয়েট), বাজুস প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান, বিএমইডির পরিচালক মমিনুল ইসলাম, স্থপতি আরিফুল ইসলাম, স্থপতি রফিক আজম ও ভিস্তারার এমডি মুস্তফা খালিদ পলাশ।
বক্তারা একমত, সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ভূমিকম্প ঝুঁকির মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। যথাসময়ে প্রস্তুতি, সচেতনতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলেও প্রাণহানি ও ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।