জুলাই গণঅভ্যুত্থানেনর সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় দেশে কোনো আতঙ্ক দেখছেন না বলে জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার (১৭ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোর কমিটির সভা শেষে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে আমি কোনো আতঙ্ক দেখতে পাচ্ছি না। সবাই তো এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করছেন। আমি তো কোথাও কোনো আতঙ্ক দেখছি না।’
সড়কে মানুষ আতঙ্কে আছে, এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা তিনি বলেন, ‘আপনি-আমি দুজনেই ভেতরে ছিলাম, সড়ক তো আমরা দেখিইনি। আর সড়কেও কোনো আতঙ্কা নেই। আমি তো সড়ক দিয়েই এসেছি।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমি গতকাল বরিশাল থেকে এসেছি। মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ একটু বেশি ডিফিকাল্ট জায়গা। তাদের বিষয় নিয়ে আমার গতকাল কথা হয়েছে। এসব এলাকায় বড় ধরনের কিছু নেই। আজকাল ইলেকট্রিক করাত দিয়ে গাছ কেটে ফেলে দেয়। পরে এই কাটাগাছ সরাতে একটু সময় লাগে।’
‘দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ’ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘দেখামাত্রই গুলি না। এখানে হলো কী, এটা সেলফ ডিফেন্সের জন্য, আপনারা হাতিয়ারের পারমিশন নেন না, ওটা তো শিকারের জন্য নেননি। গিয়েও যদি শিকার করেন, কিন্তু নেন আপনাদের ডিফেন্সের জন্য।’
আত্মরক্ষার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী বলেন, ‘আপনাকে কেউ মারতে এলে কিংবা হত্যা করতে এলে আপনার আক্রমণকারীকে নিহত করার অধিকার আছে। এটা সবদেশে সবকালে আছে, এটা আমাদের দেশে তাৎক্ষণিকভাবে হয়নি।
প্রসঙ্গত, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আর সাবেক আইজিপিকে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
সোমাবর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনার-১ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’
সোমবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ছয় অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের অপর সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।
২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিন আদালত ও জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।