ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও নানা দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি পাচার এবং আত্মসাতের নজির স্থাপন করেছে স্বাস্থ্যখাত।স্বাস্থ্যমন্ত্রীর লোকজনের নিয়ন্ত্রীত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সাথে বেশ কয়টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও পাচাব করেছেন।
এরমধ্যে বহুল আলোচিত দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর বিরুদ্ধে ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যে কোন সময় এই মামলাটি দায়ের করা হতে পারে।
দুদকের মহাপরিচালক বলেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে ‘লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইস ও টেকনোক্রেট নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের’ মালিক মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু । তিনি কৃষিজমি ক্রয়, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে তার নামে আরও ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
সব মিলিয়ে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এছাড়া মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ, সম্পদ ও ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
দুদক কর্মকর্তা বলেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে মিঠুর অবৈধ সম্পদেও আরো কিছু তথ্যেমধ্যে রয়েছে, ব্যবসা, বাড়িভাড়া, কৃষি আয়, বেতন-ভাতা, ব্যাংক সুদ, নিরাপত্তা জামানতের সুদ এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্সসহ বৈধ উৎস থেকে তার আয় হয়েছে ৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে প্রায় ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। এজন্য দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র মতে, ২০১৬ সালে প্রকাশিত বহুল আলোচিত পানামা পেপারসে নাম আসে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর। অভিযোগ রয়েছে, তার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়নকাজের নামে প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন।
এদিকে, সেন্ট্রাল মেডিসিন স্টোরসের (সিএমএসডি) সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ মৃত্যুর আগে সরকারের কাছে লিখিত প্রতিবেদনে অভিযোগ করেছিলেন, স্বাস্থ্যখাতের কেনাকাটার অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির মূল কারণ হলো এই খাত ‘মিঠু চক্র’র নিয়ন্ত্রণে থাকা। তার ওই প্রতিবেদনের পরই মিঠুর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা ও দুদকসহ একাধিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত শুরু করে।
আ. দৈ./কাশেম