রাজপথের আন্দোলন থেকে দুরে সরাতে তুলে নিয়ে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। এমন নির্যাতন চালানো হয় যে শেষ পর্যন্তু মারা গেছে ভেবে ফেলে যাওয়া হয় রাস্তায়। দুর্বৃত্তরা রাজধানীর সন্নিকটে পূর্বাচল উপশহরের কাছে নির্জন এক জায়গায় ফেলে যায় তাঁকে। যার ওপর এই অমানবিক ঘটনা ঘটেছে তিনি হলেন মো. নাহিদ ইসলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম একজন সমন্বয়ক। সেই নাহিদ ইসলামের হাতে উঠেছে ভবিষ্যত রাষ্ট্র পরিচালনার ভার।
বিজয় এবং একমাত্র বিজয়ই আমাদের লক্ষ্য- এমন কথাই শাহবাগে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম। যেই কথা সেই কাজ। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মৃত্যুও যেন বশ মেনেছে তাঁর কাছে।
চলতি বছরের জুলাই মাসের ২১ তারিখে তিনি পড়েছিলেন রাস্তার পাশে, ঠেকে ছিলেন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। আর সেই নাহিদ কিনা তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন বঙ্গভবনের দরবার হলে। শপথ নিয়েছেন রাষ্ট্র পরিচালনার।
নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন এবং সফল হোন। গত ৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বঙ্গভবনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের উপদেষ্টাদের একজন, এই ২৫ বছর বয়সী তরুণ নাহিদ ইসলাম।
তিনি এতদিন ছিলেন একজন বাংলাদেশী আন্দোলনকর্মী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম একজন সমন্বয়ক। তবে তিনি বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা। যার মর্যাদা একজন মন্ত্রীর সমান। এখন তিনি চলবেন জাতীয় পতাকাবাহী গাড়িতে। থাকনে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায়। কয়েকদিন আগেও যে আইন শৃংখলাবাহিনী তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে গিয়েছিল সেই আইন শৃংখলাবাহিনীই এখন তাকে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা দেবে। একসময় বাংলাদেশের ইতিহাসে এত নবীন উপদেষ্টা হওয়ার নজির এটাই প্রথম। তাঁর পাশাপাশি রয়েছেন আরও একজন সফল সমন্বয়ক ও বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তাঁরা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলামের পথ থেকে বঙ্গভবনে এসে শপথ গ্রহণ করাটা সুদুরপ্রসারি ছিল না। যেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে সরকার প্রথম দফায় ডিবি তাঁকে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের পর মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে উঠে এসে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘১৯ জুলাই গভীর রাতে এক বন্ধুর বাসা থেকে সাদা-পোশাকে একদল লোক তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করে। রোববার (২১ জুলাই) ভোরে তিনি নিজেকে রাস্তার পাশে দেখতে পান। পরে কোনো মতে একটি অটোরিকশায় করে তিনি বাসায় ফেরার পর সেখান থেকে হাসপাতালে যান।‘
শেষে আবারও ডিবি কার্যালয়ে বন্দি করা হয় তিনিসহ আরও ৫ জন সমন্বয়ককে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এই আটকের কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসে। এক পর্যায়ে তাঁদেরকে দিয়ে একটি ভিডিও বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তবে তারা তাঁদের এক দফায় যেন অনড় হয়ে পড়েন। ডিবি কার্যালয়ে ৩২ ঘন্টা অনশনও করেন এই নির্ভীক অকুতোভয় তরুণেরা। বৈশ্বিক-অভ্যন্তরীণ, ছাত্র-সাধারণ জনতার নানামুখি চাপে অবশেষে তাঁদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় ডিবি কার্যালয় থেকে।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেটি পরিচালিত হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন নাহিদ ইসলাম।
আ.দৈ/এআর