জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর যেসব নেতাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে, আগে সেসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে। এরপর সংস্কার। তারপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার (৩১ মে) দুপুরে জেলা শহরের পুরোনো স্টেডিয়ামে কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘরে ঘরে আল-কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে চাই। জাতীয় সংসদে কোরআনের আইন চালু করতে চাই। জামায়াতে ইসলামী ইসলামকে রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। মদিনার আদলে দেশকে একটি কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। রাসুল (সা.) যেভাবে মদিনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, ঠিক সেভাবে। আমরা বিশ্বাস করি, কোরআনের আইন ছাড়া দেশ কিংবা সারা বিশ্বে কোথাও শান্তি আসতে পারে না। কোরআনের আইন চালু হলে সব ধর্মবর্ণের মানুষ শান্তি এবং সমৃদ্ধি পাবে। আমাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে, ইসলামের ভিত্তিতে দেশকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করা। যেনতেন নির্বাচনে দেশের মঙ্গল আসবে না। আগে দরকার সংস্কার।’
জামায়াত নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনিকব্যবস্থাসহ বিদ্যমান সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে গেছে। ২০১৪ সালে তারা বিনা ভোটের নির্বাচন করেছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করেছে। আর ২০২৪ সালে নিজেরা নিজেরা ডামি নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় গেছে। দেশে আবার এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচন হোক, আমরা চাই না। আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে জনমানুষের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।’
কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘যারা যেনতেনভাবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়, তাদের সঙ্গে আমরা একমত নই। আমরা সবার আগে চাই দুর্নীতিবাজ, জুলুমবাজ ও গণহত্যাকারীদের বিচার। আমরা ওই দল (আওয়ামী লীগ) ও এসবের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার চাই। এজন্য আমরা বলেছি, আগে বিচার হবে, এরপর সংস্কার হবে আর এরপর নির্বাচন হবে। যারা বিচার চায় না, যারা শুধু তাড়াতাড়ি নির্বাচন চায়, সংস্কার চায় না, বাংলাদেশে এসব নির্বাচনের প্রয়োজন নেই।’
তাই সরকারকে বলব, ‘আগে বিচার হবে, তারপর সংস্কার হবে, এরপর সত্যিকার অর্থে নির্বাচন হতে হবে। ইলেকশন রিফর্মেশনের আগে নির্বাচন হবে না। বিচারের আগে নির্বাচন হবে না। দেশের জনগণ আসল নির্বাচন চায়। যেনতেন নির্বাচন তারা চায় না।’
এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘বিচার এবং সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পরই নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনের জন্য জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করে এটা ঠিক, কিন্তু যেনতেন করে একটা নির্বাচন বাংলাদেশে আর হতে দেওয়া হবে না। ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করে প্রকৃতপক্ষে কেউ কেউ গণহত্যার বিচার পেছনে ফেলতে চায়। ভারতের কথার সঙ্গে তাদের কথা মিলে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ওই গোষ্ঠীটি ভারতের অ্যাজেন্ডা দেশে বাস্তবায়ন করতে চায়; কিন্তু আমরা তা হতে দেব না।’
জামায়াতে ইসলামীর কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আমির মো. রমজান আলী কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কর্মী সম্মেলন শুরু হয়।