শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫,
১৭ শ্রাবণ ১৪৩২
ই-পেপার

শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫
জাতীয়
ভুয়া স্বপ্ন দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছে কয়েকশ কোটি টাকা
চটকদার বিজ্ঞাপনের আড়ালে ছুটি গ্রুপের প্রতারণার ফাঁদ!
বিশেষ প্রতিনিধি
Publish: Saturday, 17 May, 2025, 9:28 PM  (ভিজিট : 1292)

চটকদার বিজ্ঞাপনের আড়ালে ছুটি গ্রুপ আবাসন ও রিসোর্ট প্রকল্পের নামে পেতেছে প্রতারণার ফাঁদ। শেয়ার বিক্রি ও সাফ কবলা রেজিস্ট্রেশনের স্বপ্ন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ছুটি গ্রুপের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সুন্দরী নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে। 

অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, ছুটি গ্রুপের মেগা প্রজেক্ট পাঁচ তারকা মানের ‘ছুটি রিসোর্ট কক্সবাজার’-এর শেয়ারপ্রতি সাড়ে ৬ লাখ টাকা বিক্রি করছে এবং এক রুম বিক্রি করছে বহু বিনিয়োগকারীর কাছে। এতে লাভ তো দূরের কথা, বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ২০২৭ সালের মধ্যে কক্সবাজারে ছুটি রিসোর্ট নির্মাণ শেষ করার কথা বলে সাড়ে ৩ হাজার শেয়ার মার্কেটে ছাড়ে ছুটি গ্রুপ। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৩ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অনেকে বিনিয়োগের টাকা ফেরত চাইলেও নানা প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে ছুটি গ্রুপ। 

জানা গেছে, সাম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমসহ বেশকিছু মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে গাজীপুরের পুবাইলে ‘ছুটি অরণ্যবাস’ নামে একটি পাঁচ তারকা হোটেল এবং কক্সবাজারে মেগা প্রজেক্ট ছুটি রিসোর্টের জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজছে ছুটি গ্রুপ। এতে সাফ-কবলা দলিলমূলে শেয়ার মালিক হওয়ার সুযোগ এবং হস্তান্তরযোগ্য মালিকানা, ছুটির নিজস্ব রিসোর্টে ফ্রি অবকাশ যাপনের সুযোগ, ছুটি ক্লাব মেম্বারশিপ এ ৫০% থেকে ৭০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট, একবার বিনিয়োগে আজীবন হালাল মুনাফা লাভের সুবর্ণ সুযোগ, সামাজিক পদমর্যাদা বৃদ্ধি, জমিসহ আজীবন মালিকানা, উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরের সুযোগসহ নানা প্রলোভন দেওয়া হলেও গ্রাহকের পকেটকাটা ছাড়া আর কিছুই বুঝে না ছুটি গ্রুপের লোকজন, বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। 

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এভাবেই অভিনব কায়দায় গত ১৩টি বছর ধরে গ্রহকের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে ছুটি গ্রুপ। তাদের মূল টার্গেট থাকে প্রবাসী, কালো টাকার মালিক। এ ছাড়া মধ্যবিত্তদের আকর্ষণ করতে ১ থেকে ৫ লাখ টাকায় সাফ কবলারও ফাঁদ পাতা হয়। সূত্র জানায়, গ্রুপটির এমডি ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমানের রাজউক থেকে দুর্নীতির দায়ে চাকরি যায়। এরপর গ্রুপটির অপর দুই এমডি মোস্তফা কামাল ও মাসুদুর রহমান মাসুদ মিলে নিজস্ব সুন্দরী নারী কর্মী থেকে শুরু করে একাধিক নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

 এছাড়াও মাদক কারবারির সঙ্গেও জড়িত রয়েছে তারা বলে গোয়েন্দা সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই তিন প্রতারকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও বেশকিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে বিতারিত কর্মী। এরা মিলে একটি প্রতারক সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। এই সিন্ডিকেটটি বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের জন্য নিত্যনতুন প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করছে। দুর্নীতির টাকায় গত ২০১৩ সালে প্রথম গাজীপুরে ছুটি রিসোর্ট ও পূর্বাচলে ছুটি রিসোর্ট নির্মাণ করে লিজ নেওয়া জমিতে। 

পরবর্তীতে ওই নির্মিত প্রজেক্টের নাম ব্যবহার করে তারা উত্তরা-১০ নম্বর সেক্টর এবং বসুন্ধরা আবাসিকের জি ব্লকের ২৯ নম্বর রোডের ৮৪০ নম্বর প্লটে আবাসন প্রকল্পের নামে এফএনএফ প্রপারর্টিজ নামে একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান তৈরি করে হাজারো মানুষের কষ্টের টাকা আত্মসাৎ করে তাদের নিঃস্ব করে দেয়। এখন নতুনভাবে ছুটি হারমোনি, ছুটি বে, ছুটি রিসোর্ট কক্সবাজার, সিলেটে সালতানাত টি রিসোর্টের কথা বলে চটকদার বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে কোম্পানির সুন্দরী নারী কর্মীদের টোপ দিয়ে মার্কেট থেকে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সাফ-কবলা রেজিস্ট্রেশনের স্বপ্ন দেখিয়ে তারা বিনিয়োগের প্রলোভন দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে এসব টাকা। প্রকৃত পক্ষে গত ৬-৭ বছরেও এসব প্রজেক্টে কাজ শুরু তো দূরের কথা, একটি ইটও ব্যবহার করা হয়নি। কোনো ক্রেতা এখন পর্যন্ত রেজিস্টেশন বুঝে পায়নি। যদি কোনো ক্রেতা টাকা ফেরত চায় তাহলে তাকে দিনের পর দিন আজ না কাল দিবে বলে প্রতারণা করছে ছুটি গ্রুপ।
 
জানা গেছে, ছুটির পূর্বাচল, গাজীপুর ছাড়াও কুয়াকাটা এবং কক্সবাজারের মেরিনড্রাইভ সড়কে রয়েছে ছুটির প্রোজেক্ট। কক্সবাজার টেকনাফের এলাকার মেরিন ড্রাইভ সড়কের পুরায় তৈরি হচ্ছে ছুটি রিসোর্ট কক্সবাজার। যেখানে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিনিয়োগকারীরা পাবেন সাবকবলাসহ মালিকানা বুঝে নেওয়ার সুযোগ। ছুটি রিসোর্ট কক্সবাজার সাড়ে ৩ হাজার শেয়ার মার্কেটে ছাড়ছে, যার প্রতিটি শেয়ারের মূল্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা। 

বিনিময়ে বিনিয়োগকারীরা কী পাবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ছুটি রিসোর্টের এক বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, আজীবন জমি ও রিসোর্টের মালিকানা। বিনিয়োগের ওপর বার্ষিক ১৫-২০% মুনাফা। (শেয়ার প্রতি বার্ষিক ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত)। সহজ কিস্তি বা এককালীন ক্রয়ের সুবিধা। সব ‘ছুটি রিসোর্ট’-এ আজীবন ৫০% ছাড়ে থাকার সুযোগ। ভবিষ্যতে শেয়ারের মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। সাফকবলা দলিলে রেজিস্ট্রেশন। এসব স্বপ্ন দেখিয়ে গ্রাহক আকৃষ্ট করলেও পরবর্তীতে লাভ তো দূরের কথা, মূল টাকা পেতেই হয়রানিতে পরতে হয় গ্রাহকদের। ছুটি রিসোর্ট কক্সবাজারের কাজ ২০২৭ সালে শেষ করার কথা থাকলেও দেখা যায়, এখন পর্যন্ত ৩ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছুটি যে মানের রিসোর্ট তৈরির কথা বলে প্রচার চালাচ্ছে তা শেষ করতে কত বছর লাগবে জানে না কেউ। 

জানা গেছে, কক্সবাজারে ছুটি গ্রুপ শেয়ার বিক্রির নামে প্রতারণা করছে নিয়মিত। অনেক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে ৬ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকায় প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করে কক্সবাজারের হোটেলের। পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীরা লাভ তো দূরের কথা; বিনিয়োগের টাকাও ফেরত পান না তারা। জমির মালিকদের সঙ্গে জমি বায়না করে কাজ শেষ না করেই হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়েছে জমির মালিকদের।

সূত্র জানায়, কক্সবাজারে সাড়ে ৬ লাখ টাকায় সাফকবলা রেজিস্ট্রেশনের এই প্রতারণাটি স্থানীয়ভাবে ‘টাইম শেয়ারিং’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তারা নামমাত্র মালিকানা দিলেও পুরো বিষয়টিই অবৈধ। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী বছর শেষে মুনাফা পাওয়া তো দূরের কথা, উলটো তাদের আসল টাকা খোয়াতে হচ্ছে। ছুটি গ্রুপ কক্সবাজার, কুয়াকাটাসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় হোটেল নির্মাণের নামে এই টাইম শেয়ারিং ব্যবসা শুরু করছে। তাদের মূল টার্গেট থাকে প্রবাসী, কালো টাকার মালিক। এ ছাড়া মধ্যবিত্তদের আকর্ষণ করতে ৫ লাখ থেকে সাড়ে ৬ লাখ সাফকবলার এই ফাঁদ পাতা হয়। স্বল্প টাকায় সাফকবলা মালিকানার এই চটকদার বিজ্ঞাপনে নিঃস্ব হয়েছে বহু পরিবার। 

প্রতারণার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছুটি গ্রুপের এই প্রতারণা সম্পর্কে শেয়ারহোল্ডাররা একজন আরেকজনের বিষয়টি কখনোই জানতে পারেন না। এভাবে একটি হোটেলের মালিকানা হিসেবে হাজার হাজার শেয়ার বিক্রি হচ্ছে। যাদের কেউ কাউকে পরস্পর চেনেন না। একই শেয়ার পুনরায় আরেক গ্রুপের কাছে সাফকবলা বলে বিক্রি করা হয়। শেয়ার মালিকদের বছর শেষে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লাভ দেখানো হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লোকসান দেখিয়ে ভবিষ্যৎ প্রকল্প এবং মেইনটেন্যান্স হিসেবে আসল টাকা রেখে দিয়ে বছরের পর বছর ঘোরানো হয়।

আ. দৈ./ কাশেম/ এস রহমান

আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৪১৪তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
মিডল্যান্ড ব্যাংক ও টালিখাতার উদ্যোগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর জন্যে ডিজিটাল আর্থিক সেবায় নতুন সম্ভাবনা
মেঘনা ব্যাংকের ১৯৬তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৯৭তম সভা অনুষ্ঠিত
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক সিকিউরিটিজের ৪৯তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

কমার্স ব্যাংকের এমডি মোশারফ হোসেনকে অপসারণ
দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত ওমর ফারুক এমডি হতে মরিয়া
কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থী সাজিদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটনের পক্ষে ইবি উপাচার্য
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে সংসদ: সালাহউদ্দিন
জুলাই শুধু স্বৈরাচার মুক্তির নয়, পুনর্জন্মেরও মাস: প্রধান উপদেষ্টা
জাতীয়- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝