বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী উমামা ফাতেমা। তিনি জানিয়েছেন, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গে যুক্ত নন, ব্যক্তিগতভাবে এনসিপির সঙ্গে তার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। সোমবার রাতে তিনি এ ধরনের একটি স্ট্যাটাস দেন।
এ স্ট্যাটাসের বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, এনসিপিতে যোগ না দেওয়া সত্ত্বেও অনেকে তাকে নতুন এ দলের আদলেই দেখার চেষ্টা করেন। সে জন্যই তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সদস্যসচিব ছিলেন ঢাবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা।
গত বছরের অক্টোবরে সংগঠনটির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করা হলে তিনি মুখপাত্রের দায়িত্ব পান। সেই সময় ছাত্র ফেডারেশন থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় অংশ এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু উমামা সেদিকে হাঁটেননি।
এখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় আছেন উমামা। প্ল্যাটফর্মটির সাংগঠনিক কাঠামো আবারো পুনর্গঠিত হতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পুনর্গঠিত কমিটিতে উমামা শীর্ষ পদপ্রত্যাশী, এমন আলোচনা আছে।
এ আলোচনার মধ্যে সোমবার রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন এই নেত্রী।
তিনি লিখেছেন, সবার উদ্দেশে একটা ছোট ঘোষণা। আমি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমার অনেক পরিচিত ব্যক্তিবর্গ এই দলটির সঙ্গে আছেন। ব্যক্তিগতভাবে এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। তাই এনসিপি–সংক্রান্ত পরামর্শ, সাংগঠনিক আলাপ বা প্রস্তাবনা আমার কাছে উপস্থাপন না করার অনুরোধ রইল। এতে আপনার, আমার দুজনেরই সময় বাঁচবে।
তিনি এ পোস্টের বিষয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি গণমাধ্যকে। তিনি বলেন, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক পেরিফেরিসহ (পরিসর) সবার কাছ থেকে আমাকে নিয়মিত এসব প্রশ্ন মোকাবিলা করতে হয় যে আমার দল কী করছে বা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? মূলত তারা এনসিপি–বিষয়ক আলোচনা করতে চায়। বিভ্রান্তির কারণে অনেকে আমাকে এনসিপির প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করার চেষ্টা করে। অর্থাৎ আমাকে ওই দলের আদলে ভাবার একটা প্রবণতা আছে। এ জন্য আমি স্ট্যাটাসটা দিয়েছিলাম, যাতে মানুষ বিষয়টা পরিষ্কার হয় যে আমি এনসিপির সঙ্গে যুক্ত নই।
উমামা আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটি এখনো ডিজলভড (বিলুপ্ত) হয়নি। এর কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। এরপর নতুন করে কার্যক্রমও শুরু হবে।
উমামার সেই স্ট্যাটাসের নিচে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। উমামার প্রতি প্রশ্ন রেখে আকিব হাসান মাহি নামে একজন লিখেছেন, তাহলে আপু এদেশের মানুষজন কেন বৈছাআকে (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) এনসিপির পার্ট মনে করে? আমরা চাই, বৈছাআ একটি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত প্লাটফর্ম হোক।
মোহাম্মদ জামশেদ লিখেছেন, আপনার সিদ্ধান্ত যথাযথ। নিজেকে সক্রিয় রাখুন।আপনার প্রতি ভালো ধারণা আছে, ভালো কিছু আশা করছি। সত্য ও ন্যায়ের সঙ্গে থাকুন- আল্লাহ তায়ালা আপনার সঙ্গে থাকবে।আর মুমিনের জন্য আল্লাহ তায়ালা যথেষ্ট।
নাজমুল বাবু লিখেছেন, জেনে উপকৃত হলাম আপা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি তৈরি হয়েছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম থেকে এনসিপি তৈরি হয়েছে। আপনি এখনো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের মাতা-পিতা। কিন্তু আপনার এনসিপির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই।
আচ্ছা একটা কথা ক্লিয়ার করেন তো- আপনাদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যে অফিসিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, সেখানে সারাদিন এনসিপির প্রচারণা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গুণকীর্তন করা হয় কেন? সেখানে সারাদিন বিএনপি, আওয়ামী লীগের গোষ্ঠী উদ্ধার করা হয় কেন? সেখানে জামায়াতের প্রশংসা করা হয় কেন? আপনি এনসিপির কেউ না হলেও, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র।