ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনার ফুফাতো ভাই, আওয়ামী লীগের অত্যন্ত প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম ওরফে শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতর মাধ্যমে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্প অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া শেখ সেলিম ও তার পরিবারের ৯১ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনেেনর বিষয়টি অনুসন্ধান করছে দুদক।
দুদকের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ সেলিম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের ১ হাজার ৩০০ শত কোটি টাকার টেন্ডার কাজে পছন্দের ঠিকাদারের নিকট থেকে ১০/১৫ শতাংশ হারে কমিশন গ্রহণপূর্বক কার্যাদেশ প্রদান করাতেন। গোপালগঞ্জের বাইরে চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও নাটোরের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ রয়েছে।
প্রাপ্ত এই অভিযোগটি অনুসন্ধান কওে তথ্যতা পাবার পরই তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে সুানদিষ্ট ধারায় মামলা দায়েরের সিন্ধান্ত গ্রহণ করেছে দুদক। ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দ্রুত আত্মগোপনে আছেন অভিযুক্ত শেখ সেলিম।
গতকাল রোববার (১৬ মার্চ) দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে প্রেস ব্রিাফংকালে এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই সিন্ধান্তের ফলে যেকোন সময় অভিযুক্ত শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা, পেনাল কোডের ১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিয় আইন ২০১২ সালের আইনের ৪ (২ ও ৩) ধারায় মামলা দায়ের হবে। ফজলুল করিম সেলিম (শেখ সেলিম) ও তার পরিবারের ৯১ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনেেনর বিষয়টি অনুসন্ধান করছে দুদক। ইতোমধ্যে গত বছরের ২০ আগস্ট তলব শেখ সেলিম ও তার পরিবারের আয়-ব্যয়ের হিসেবের নথি তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সূত্র মতে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের সবশেষ কয়েকটি সরকারে মন্ত্রিত্ব না থাকলেও শেখ পরিবারের প্রভাব কাজে লাগিয়ে গত ১৫ বছরে উন্নয়ন কাজে নিয়মিত কমিশন বাণিজ্য করে গেছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানের ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার কাজে পছন্দের ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০ / ১৫ শতাংশ হারে কমিশন গ্রহণ করার সুনির্ষ্টি একটি অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
এরপর টানা চারটি সংসদে ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। শেখ মুজিবের ভাগনে হওয়ার সুবাদে মন্ত্রিত্ব না থাকলেও স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, সড়ক পরিবহনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারি কাজের বড় অংশ ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। বিশেষ করে বৃহত্তর ফরিদপুর, খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব উন্নয়নকাজ ভাগবাটোয়ারা করতেন তিনি। বিনিময়ে মিলত ১০/১৫ শতাংশ কমিশন।
সূত্রমতে, সরকারি কাজের নিয়ম অনুযায়ী কোনো কাজের দরপ্রস্তাবের তথ্য গোপন াকে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাইরে অন্য কারো এটি জানার কথা নয়। কিন্তু শেখ সেলিম প্রতিটি উন্নয়নকাজের জন্য দরপ্রস্তাব জমা দেওয়া ঠিকাদারদের আর্কি প্রস্তাবের তথ্য পেয়ে যেতেন এবং এরপরই কাজ দেওয়া ও কমিশন নেওয়ার সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বনানীতে শেখ সেলিমের বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজের হিসাব মিলেছে।
আরো জানা যায়, রাজধানীর বনানীর বাড়িথেকে উদ্ধার হওয়া ওই নেিত গোপালগঞ্জের ১১টি, চুয়াডাঙ্গার একটি, হবিগঞ্জের একটি, টাঙ্গাইলের একটি, ময়মনসিংহের একটি, ফরিদপুরের একটি, নাটোরের একটি, খুলনার তিনটি এবং রাজশাহীর ুটি প্যাকেজের দরপত্রের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। নথির পাতায় পাতায় বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে নির্বাচিত ঠিকাদার, কাজ শেষ করার সময় ও কমিশনের হার উল্লেখ রয়েছে। ওই নথির অনুলিপিসহ একটি অভিযোগ দুকে জমা হয়েছে।
অভিযোগে অরো উল্লেখ,গোপালগঞ্জেরই ১১টি উন্নয়নকাজ ১১ প্যাকেজে ভাগ করে ঠিকাদার নির্ধারণ হতো। এসব প্যাকেজে বাউন্ডারি ওয়াল, বিদ্যুতের সাব স্টেশন, গ্যালারি শেড, স্টেডিয়াম সংস্কার ও উন্নয়ন, হোস্টেল কাম অফিস ভবন, উইমেন স্পোর্টস কমপ্লেক্সে জিমনেসিয়াম, স্টেডিয়াম ও স্পোর্টস কমপ্লেক্সে গ্যালারি চেয়ার স্থাপনসহ নানা নির্মাণকাজের তথ্য রয়েছে। যার মধ্যে বিএফএল/এইচএলসি-জে/ভি নামে ১২ কোটি ২৩ লাখ ৯৯ হাজার; কিউ এইচ মাসুদ অ্যান্ড কোং নামে ১১ কোটি ৬০ লাখ ৩৯ হাজার; মেসার্স আনাম ট্রেডার্সের নামে ১০ কোটি ২২ লাখ ৫৬ হাজার; এ, এস-এ এটকো- জে/ভি নামে ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া মার্কেন্টাইল কর্পোরেশনের নামে ১১ কোটি ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার, বিএফএল-এএলসিএল জে/ভি নামে ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার, কিউ এইচ মাসুদ অ্যান্ড কোং নামে ১৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭৮ হাজার, মেসার্স আনাম ট্রেডার্সের নামে ১১ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে।
আ. দৈ./ কাশেম