চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম, কিছুই করার ছিল না'- বাসে ডাকাতি ও 'ধর্ষণ' বিষয়ে এমটাই জানান যাত্রীরা। ঘটনাটি গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির পাশাপাশি দুই নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনারও অভিযেগ উঠেছে।
এ ঘটনায় নাটোরে সন্দেহভাজন আটক বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তারা হলেন, ইউনিক রোড রয়েলস বাসের চালক বাবলু ইসলাম (৩৫), চালকের সহকারী সুমন ইসলাম (৩৫) ও সুপারভাইজার মাহবুল আলমকে (৩৮)।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জামিন পেলেও বিষয়টি বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আদালত সূত্রে জানা যায়।
ঢাকা-রাজশাহী রুটে মধ্যরাতে ডাকাতির শিকার হওয়া বাসটি প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতদের দখলে ছিল। এ সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে বিদেশী একটি গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন বাসটিতে থাকা যাত্রীরা।
রাতে যেসব যাত্রী বাসটিতে ছিলেন, তাদের মধ্যে দুইজনের সাথে কথা বলেছে বিদেশী এক গণমাধ্যমের বাংলা শাখার সংবাদকর্মীরা। তারা অভিযোগ করছেন, বাসটিতে অন্তত একজনকে ধর্ষণ করা হয়েছে সেই রাতে। তবে সরেজমিনে পাওয়া সাক্ষাৎকারে ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করেন আজকের দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে।
বাসটি যেহেতু চলমান অবস্থায় ছিল, তাই এই ঘটনায় একাধিক স্থানের নাম উঠে আসছে। সেগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো, নাটোরের বড়াইগ্রাম ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর মোস্তফা কামাল জানান, মামলাটি ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার হওয়ায় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট না থাকায় আদালত তাদের জামিনের আদেশ দেন।
যাত্রীরা জানান রাত সাড়ে ১১টায় বাসটি রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বাস একটু দূরে যেতেই তিনজন যাত্রী ওঠেন, যাদের সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন হেলপার। এরপর বাস বাইপাইল এলাকায় এলে সেখানে আরও পাঁচজন গাড়িতে ওঠেন। এরপর পাঁচজনের একজন ড্রাইভারকে বলেন ওস্তাদ অনেকক্ষণ গাড়ি চালিয়েছেন এবার ওঠেন, আমরা চালাব। তাদের একজন গিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করেন। এর ১০ মিনিট পরেই চাকু-ছুরি বের করে সবাইকে মারধর এবং ডাকাতি শুরু করে। বাসের যাত্রীদের একেকজনকে ৮-৯ বার চেক করা হয়েছে, যা পেয়েছে সব নিয়ে গেছে। মেয়েদের কানের দুল ছিঁড়ে নিয়েছে, প্যান্ট ছিঁড়ে দিয়েছে। ডাকাতির পুরো কার্যক্রমটি আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার ভেতর শেষ করেছে। পরে নির্জন একটি জায়গায় গিয়ে তারা নেমে পড়েছে।
এরপর আগের ড্রাইভার জানান গাড়িতে তেল নেই আপনারা এখানে নেমে যান। এসময় কৌশলে লুকিয়ে রাখা মোবাইল দিয়ে ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ আসে। হাইওয়ে পুলিশ নিয়ে যায় মির্জাপুর থানায় সেখানে মামলা গ্রহণের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তার জন্য ফজরের আজান পরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললে, যাত্রীরা বড়াইগ্রাম এসে বাস থামিয়ে দেয়।
বাসে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি না এমনটা জানতে চাইলে যাত্রীদের একাংশ জানান ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। তবে নারীদের সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করা হয়েছে দুজন মেয়ের সাথে। বলা যায় ধর্ষণ ছাড়া সবই করেছে ডাকাতরা।
বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, বাসের যাত্রীরা মৌখিকভাবে পুলিশকে ডাকাতি হওয়ার কথা বলেছেন। বাসে ডাকাতি বা বাসের যাত্রীদের ধর্ষণের ব্যাপারে কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ দেননি। ঘটনাস্থলও অন্য জেলায়। তাই আটক বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজারকে কার্যবিধি ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
এমআই