চলতি বিপিএলে দুর্বার রাজশাহী দলটি শুরু থেকেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বিতর্ক আরও গভীর হয়েছে। ক্রিকেটারদের বেতন না দেওয়া, প্র্যাকটিস বর্জন, বিদেশি খেলোয়াড়দের ম্যাচ বয়কট, চেক বাউন্সের মতো একের পর এক ইস্যুতে সমালোচিত হয়েছে দলটি। শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, বিদেশি খেলোয়াড়দের দেশে ফেরাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এই সব কাণ্ডের পেছনে যে নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত, তিনি হলেন দুর্বার রাজশাহীর মালিক শফিকুর রহমান। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের এমডি পরিচয়ের বাইরে এখন তার সবচেয়ে বড় পরিচিতি এই বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক হওয়া। তবে ব্যবসায়ী হিসেবেও তিনি বিতর্কিত এবং তার রাজশাহী দলের মালিকানা নেওয়ার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ: তথ্য পাওয়া দুষ্কর
ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ সম্পর্কে অনলাইনে খুব কম তথ্যই পাওয়া যায়। এটি মূলত আবাসন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, উত্তরার হাজী ক্যাম্প, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মিলন অডিটোরিয়াম, বিজয় স্মরণীর ফোয়ারাসহ কয়েকটি স্থাপনার নির্মাণকাজ তাদের রেকর্ডে রয়েছে।
তবে প্রতিষ্ঠানটি রিহাব (রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)-এর অন্যতম নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করলেও, রিহাবের ওয়েবসাইটে তাদের কোনো নাম নেই। এমনকি ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের ফেসবুক পেজেও গত ১০ বছর ধরে কোনো আপডেট নেই।
বিপিএলে কীভাবে এলো ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ?
যমুনা টিভির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা রয়েছে। সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা অন্তত তিনজনের হাতে ছিল।
প্রথমে বিসিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তার ব্যবসায়ী বন্ধু কবির নেওয়াজ এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি কেনেন। তিনি দলটি কিনতে দেড় কোটি টাকার মধ্যে অর্ধেক পরিশোধ করেন। পরে তার ভাগ্নে ইমতিয়াজ জামিল দীপন ও সিসিডিএম কো-অর্ডিনেটর আমিন খান মালিকানার অংশীদার হন।
এরপর আমিন খান ৪০ লাখ টাকা দিয়ে মালিকানায় অংশ নেন, তবে কনসোর্টিয়াম গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে ভ্যালেন্টাইন গ্রুপকে মালিকানায় যুক্ত করা হয়। এই একই গ্রুপ বিপিএলের আরেক দল ঢাকা ডমিনেটর্সের সাথেও যুক্ত ছিল। একপর্যায়ে ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ ও শফিকুর রহমান সম্পূর্ণ মালিকানা দাবি করে এবং ড্রাফটের আগের রাতে একক মালিক হিসেবে আবির্ভূত হয়।
বিসিবি সভাপতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে গুঞ্জন
বিপিএলের রাজশাহী দলের মালিকানা নিয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুকের সঙ্গে শফিকুর রহমানের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে গুঞ্জন ছিল। তবে বিসিবি সভাপতি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,
"অনেকে বলছে, রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক আমার বন্ধু। এটা কীভাবে সম্ভব? আমি তাকে আগে কখনোই দেখিনি। মালিকানা নেওয়ার আগে আমি চারবার তার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আমি তো জানতাম না সে এ রকম কিছু করবে।"
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে শফিকুর, পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি
ক্রিকেটারদের বেতন নিয়ে বিতর্কের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠক করে দুর্বার রাজশাহী। সেখানে আশ্বাস দেওয়া হয় যে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল ক্রিকেটারের বেতন পরিশোধ করা হবে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয় শফিকুর রহমানকে। তার কাছ থেকে পাওনা পরিশোধের বিষয়ে নতুন করে আশ্বাস নেওয়া হয়। তবে এখনো এই বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।
আ. দৈ./ সাধ