এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কয়েকটি ব্যাংক। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পরিচালনা পর্ষদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা খারাপ ব্যাংকগুলোর কোনো এমডিকেই পদত্যাগ করতে হয়নি। অথচো এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভালো ব্যাংকটির এমডি জাফর আলমে কোনো প্রকার অনিয়মের তদন্ত ছাড়াই নতুন চেয়ারম্যান ড. এম সাদিকুল ইসলামের যোগসাজকে পদত্যাগে বাধ্য করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, একজন ৩৩ বছরের অভিজ্ঞা ব্যাংকারকে কোনো প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়াই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এভাবে জোরপূর্বকভাবে পদত্যাগে বাধ্য করাতে পারে না। এই কালচার তৈরি হলে ভালো ব্যাংকার তৈরি হবে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারো ব্যাপারে কোনো অভিযোগ থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নিবে। তার আগে এভাবে জোরপূর্বকভাবে একজন ব্যাংকের এমডিকে পদত্যাগ করাতে পারে না। এতে ব্যাংক ও আর্থিকখাতে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। তখন কোনো ভালো ব্যক্তি এ পেশায় থাকতে চাইবে না।
জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক এক আদেশে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ দিয়েছে। একজন উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারসহ পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক পরিচালনা পর্ষদের নতুন বোর্ড গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম সাদিকুল ইসলাম। পরিচালক হয়েছেন, ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার মেজর (অব.) মো. রেজাউল হক, স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাকসুদা বেগম, রূপালী ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোরশেদ আলম খন্দকার এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মো. আনোয়ার হোসেন।
এতে এসআইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো আদেশে বলা হয়, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। অথচো নতুন পরিচালনা পর্ষদ প্রথমে অনিয়মভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পদত্যাগে বাধ্য করেন। এ নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চলছে ব্যাপক সমলোচনা। এভাবে একজন এমডিকে পদত্যাগ ইতিহাসের কলংক হয়ে থাকবে।
এসআইবিএল ব্যাংকের নাম প্রকাশ না শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, কোন প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি ছাড়াই এভাবে এমডি স্যারকে পদত্যাগ করা ঠিক হয়নি। এতে সবার মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আমরা এখন ভয়ে আছি। কখন এস আলমের লোক বলে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেয়। তবে পরিচালনা পর্ষদের উচিত ছিলো আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়া। যদি সে দুর্নীতি বা কোনো অনিয়ম করেও থাকে, তাহলে তাগে পদত্যাগ না করিয়ে আগে তদন্ত করে দোষী হলে আইনের আওতায় আনা উচিত ছিলো। এভাবে পদত্যাগ করানো কেনো সমধান না। এটা ব্যাংকিং নীতির মধ্যে পড়ে না।
জানা যায়, সবচেয়ে খারাপ ব্যাংকটিকে যিনি ঘুরে দাঁড়িতে সক্ষম হয়েছেন তিনি হলে জাফর আলম। যার হাত ধরে ব্যাংকটির আমানত ও রেমিট্যান্স আহরণসহ বিভিন্ন সূচকগুলোতে অবদান রাখেছেন তিনি হলেন জাফর আলম। এস আলমের গ্রুপরে অন্য ব্যাংকগুলোর চেয়ে এই ব্যাংকটি অনেক ভালো অবস্থা রয়েছে। এছাড়া খেলাপি ঋণ কমানোর পাশাপাশি সঠিক বিনিয়োগে রয়েছে অবদান।
এসআইবিএলের সদ্য পদত্যাগকারী জাফর আলমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন পর্ষদ আমাকে ডেকে পদত্যাগ করতে বলে। কি কারণে পদত্যাগ কবরো নতুন পর্ষদের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলছেন না। শুধু বলছে পদত্যাগ করতে হবে। তাই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। এ ব্যাপারে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছি।
এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হলো, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকও নিয়ন্ত্রণে ছিলো।
জোরপূবর্ক পদত্যাগের ব্যাপারে নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম সাদিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'জাফর আলমে জোরপূর্বকভাবে পদত্যাগ করানো হয়নি। তিনি সেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন'।
আ. দৈ. /কাশেম/ রমজান