ভারত সরকার ও শেখ হাসিনার দেশটিতে থাকার মেয়াদ বাড়ানো প্রসঙ্গে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ওয়ালকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আমরা শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাই। তাই ভারত সরকারের কাছে আমরা জানিয়েছি। কিছু আইনি বিষয় আছে। সেটা শেষ হলে আশা করি তাকে ফেরানো যাবে।
গত ৯ জানুয়ারি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ওয়াল এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে চাইছে বাংলাদেশ। জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাসপোর্টও বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু আবারও পরিত্রাতা হিসেবে এগিয়ে এসেছে ভারত। বাড়ানো হয়েছে শেখ হাসিনার ভারতে থাকার মেয়াদ। এই নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে আরও ফাটল ধরতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহল মহল। যদিও গোটা বিষয়টিই আইনের ওপর নির্ভর করছে বলে দাবি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ভারতকে নিয়ে ‘স্পিকটি নট’ অবস্থান তার।
বুধবার ভিসার মেয়ার বাড়ানোর কথা সামনে আসার পরই দ্য ওয়ালের তরফে যোগাযোগ করা হয় শফিকুলের সঙ্গে। তিনি প্রথমেই জানান, বর্তমানে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো তাদের প্রধান লক্ষ্য। কারণ হিসেবে গত বছর জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে চলা গণ অভ্যুত্থান ও তাতে সরকারে ভূমিকার কথা বলেন। ওই সময়ে ১৫০০ থেকে ২ হাজার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের শেখ হাসিনা সরকার খুন করেছে বলে অভিযোগ করে তিনি। যার ফলে তার শাস্তি প্রাপ্য। সেই শাস্তি দিতে গেলে দেশে ফেরাতেই হবে।
তিনি দ্য ওয়ালকে বলেন, ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের খুন করেছে। এটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এর মধ্যে হিন্দু ছিলেন অনেকে, মহিলা ছিলেন। কাপড় জামার কাজ করতেন এমন লোকজন ছিলেন। অনেকে ছিলেন। এটার জন্য উনি দায়ী। বহু মানুষ খুনের শিকার হয়েছেন। আমরা জানি কী ভয়াবহ সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা গিয়েছি। আয়না ঘরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যাদের খুন করা হত, ওখানে রাখা হত। পরে সাংবাদিকদেরও নিয়ে যাওয়া হবে। তার আমলে বিরাট দুর্নীতি হয়েছে। শ্বেত পত্রে দুর্নীতি হয়েছে। ১৬ মিলিয়ন ডলার প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের টাকা এদিক ওদিক করা হয়েছে। চোরতন্ত্র জারি করেছিলেন শেখ হাসিনা। তার তো বিচার হবে। তার জন্য তাকে দেশে ফেরাতে হবে আগে।
প্রেস সচিবের অভিযোগ, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। বহুদিন থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা কথা উঠছিল। প্রথম থেকেই অভিযোগ ছিল দুর্নীতির। ওই সময় ৬৬০-রও বেশি মানুষ গুম হয়েছিলেন। কার অর্ডারে গুম করল। আমাদের মানুষের কাছে, জনগনের কাছে স্পষ্ট হাসিনা কী করেছেন। কোথায় দেশকে রেখেছেন। কী ভয়াবহ অবস্থায় রেখেছিলেন ১৫ বছর। তারেক রহমানের একটা ভাষণ প্রচার করলেন অ্যারেস্ট হয়ে গেল। কেউ শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু বললেন অ্যারেস্ট হয়ে গেলেন। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কিছু বলার কোনও অধিকার কারও ছিল না। কোনো কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না। আপনি যদি সেই সময়ের রিপোর্টগুলো দেখেন, বুঝতে পারবেন।
হাসিনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে সেই কাজ বর্তমানে ইউনুস সরকারও করছে, এমন কথা ঘুরছে বাংলাদেশে। এই প্রসঙ্গে শফিকুলের দাবি, আওয়ামী লীগ এত কুকাম করে গেছে। এখন গল্প ফাঁদছে। ভারতের প্রেসকে বলা হচ্ছে দেখুন। একাধিক কেস ওদের বিরুদ্ধে হয়েছে, কারা করেছেন দেখুন। সরকার করেছে, কোনওদিন না। আসুন দেখুন কারা করছে এগুলো। যাদের ছেলে-মেয়ে খুন হয়েছেন, তারা এই কেসগুলো করেছেন। আপনার আসুন পুলিশের সঙ্গে কথা বলুন। আসলটা দেখুন।
সংবাদিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যান করা নিয়ে তার দাবি, সাংবাদিকদের একটা অংশ হাসিনা সরকারের থেকে টাকা নিয়ে ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে। যাতে সরকার চুরি করতে পারে। পারলে শেখ হাসিনার প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও দেখুন। সাংবাদিকদের তেল দিচ্ছেন। আপা আপা বলতে বলতে এই অবস্থা। এখানে যে ভয়াবহ ক্রাইম হচ্ছে, কেউ দেখেনি এতদিন। একবার ভিডিও দেখুন। এই ধরনের প্রেস কনফারেন্স নর্থ কোরিয়াতেও হয় না।
আওয়ামী লিগ মাইনাস হাসিনা। বলছেন অনেকেই। প্রশ্ন শেষ করার আগেই শফিকুল বলেন, কে কাকে লিডার মানবে তার পার্সোনাল ফ্রিডমের বিষয়। আপনি চোরকে লিডার মানবেন না কাকে মানবেন সেটা আপনার বিষয়। কিন্তু আপনি যদি চোরকে বা খুনিকে লিডার মনে করেন, মানুষ আপনাকে কেমনভাবে নেবে সেটা ভাবার বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভাল। বিএনপি বলছে নিজেদের মতো। আমাদের সঙ্গে সম্পর্কে সমস্যা হয়নি। ভাল আছে।
খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে ক্ষোভ উগরে দিয়ে শেষে প্রেস সচিব বলেন, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য গেছেন। উনি খুবই অসুস্থ। সিরিয়াস রোগে ভুগছেন। তাকে শেখ হাসিনা বিদেশে যেতে দেয়নি। বারবার ব্লিডিং হচ্ছে। বিদেশে ট্রিটমেন্ট দরকার। উনি ফিরবেন বাংলাদেশে সুস্থ হয়ে। উনি যখন গেলেন তখন হাজার হাজার মানুষ সংবর্ধনা জানালেন।
আ. দৈ/ আফরোজা