সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫,
৭ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার

সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
বিশেষ সংবাদ
৯দিন যুদ্ধ করে বেপরোয়া বাঘিনিকে ধরতে পারায় স্বস্তির নিঃশ্বাস:বন কর্মকর্তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Monday, 30 December, 2024, 1:09 PM  (ভিজিট : 35)

ভারতের ওড়িশার সিমলিপাল বাঘ প্রকল্প থেকে সম্প্রতি একটি বাঘিনী পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলে ঢুকে পড়ে সেখানে আশ্রয় নেয়। বাঘিনীটির নাম জিনাত। বাঘিনি আতংকে সাধারণ মানুষকে থাকতে হয়েছিল আতংকে। অবশেষে ৯দিন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শেষে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহির জঙ্গলে বন কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়েছে বাঘিনি জিনাত। বেপরোয়া বাঘিনি ধরতে পারায় অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তারা।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, নয়দিন আগে ঝাড়খণ্ডের কুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবান্ধি এলাকা হয়ে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার কাটুচুয়া জঙ্গলে প্রবেশ করেছিল বাঘিনি জিনাত। তার পর দু’দিন ধরে কখনও ময়ূরঝর্ণার জঙ্গলে, আবার কখনও কাকড়াঝোড় জঙ্গলে নিজের ঠিকানা বদল করছিল বাঘটি। পরে তেলিঘানার জঙ্গল হয়ে জ়িনত প্রবেশ করে পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ান থানা এলাকার রাইকা পাহাড়ে। রাইকা পাহাড় ও পার্শ্ববর্তী ভাঁড়ারি পাহাড়ে দিন চারেক কাটিয়ে মানবাজারের ডাঙ্গরডিহির জঙ্গলে হাজির হয় সে। সেখান থেকেই শুক্রবার ভোরের দিকে জ়িনত কুমারী নদী পেরিয়ে ঢুকে পড়ে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের গোঁসাইডিহির জঙ্গলে। বন দপ্তরের লাগাতার চেষ্টায় রবিবার সন্ধ্যার মুখে সেখানেই ধরা দেয় বাঘিনি।

সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম জেলায় থাকার সময় সে ভাবে বাঘিনিকে ধরার চেষ্টা করেনি বন দপ্তর। শুধুমাত্র তার গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছিল। বন দপ্তর আশা ছিল বাঘিনি স্বেচ্ছায় ফিরে যাবে ওড়িশার সিমলিপালের পুরনো ঠিকানায়। কিন্তু বন দপ্তরের সেই আশায় জল ঢেলে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের দিকে চলে যায় বাঘিনি। ফলে পরিকল্পনা বদল করে তাকে খাঁচাবন্দি করার কৌশল নেয় বন দপ্তর। রাইকা পাহাড়, ভাঁড়ারি পাহাড়ে বিভিন্ন সময় ছাগল ও মোষকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করে জ়িনতকে ধরার চেষ্টা চালায় বন দপ্তর। কিন্তু লোভনীয় খাবারে রুচি না-দেখিয়ে নিজেই শিকার ধরে খেতে থাকে জ়িনাত। যাবতীয় চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় বন দপ্তর কর্মকর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হতে শুরু করে।

শুক্রবার থেকে বাঘিনি পাহাড়ি জঙ্গল ছেড়ে অপেক্ষাকৃত লোকালয় লাগোয়া জঙ্গলে আশ্রয় নিতে শুরু করায় চিন্তা আরও বৃদ্ধি পায় বন দপ্তরের। তার পরেই বাঘিনিকে খাঁচাবন্দি করার কৌশল বদলে ঘুমপাড়ানি গুলি ছু়ড়ে তাকে ধরার কৌশল নেয় বন দপ্তর। তবে সে কাজেও ধূর্ত বাঘিনিকে বাগে আনতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়। শনিবার বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহির জঙ্গলে দিন ও রাতের বিভিন্ন সময়ে নাইলনের জালের ঘেরাটোপে তিন বার ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়েও কাবু করা যায়নি তাকে। ঘুমপাড়ানি গুলি শরীরে লাগার পর প্রাথমিক ভাবে ঝিমুনিভাব এলেও কিছুক্ষণ পরেই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে জ়িনত। আবার জঙ্গলেই কোথাও লুকিয়ে পড়ছিল সে। ফলে শনিবারও অধরা থেকে যায় ওই বাঘিনি। এর পর গোটা জঙ্গল ঘিরে ফেলে জায়গায় জায়গায় আগুন লাগিয়ে তাকে খাঁচাবন্দি করার কৌশল নেওয়া হয়।

রোববার আবার কৌশল বদল করে বন দপ্তর। সকালে বাঘিনিকে আরও কাছ থেকে সঠিক নিশানায় ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ার সিদ্ধান্ত নেয় বন দপ্তর। গোঁসাইডিহি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে জাল পেতে জ়িনতের গতিবিধি আরও ছোট এলাকায় সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়। দুপুর ঠিক ৩টা ৫৮ মিনিটে বিশেষজ্ঞ দল জঙ্গলের ঘেরা অংশে প্রবেশ করে অত্যন্ত কাছ থেকে জ়িনাতের শরীরের নির্দিষ্ট স্থান লক্ষ্য করে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ে। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে শিথিল হয়ে পড়ে জ়িনাতের শরীর। এ বার আর অপেক্ষা না-করে তড়িঘড়ি কাবু হয়ে পড়া বাঘিনিকে ওড়িশার সিমলিপাল থেকে আনা বিশেষ খাঁচায় বন্দি করে ফেলে বন দপ্তর।

রাজ্যের মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলানডাইভেল বলেন, “বাঘিনি ধরা পড়ার পর সুস্থ রয়েছে। বিষ্ণুপুর বন বিভাগের দপ্তরে নিয়ে গিয়ে বাঘিনির একদফা শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে। আপাতত তাকে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আলিপুর চিড়িয়াখানায়।”

বাঘিনি ধরা পড়ার পরেই সামাজিকমাধ্যমে একটি পোস্ট করে বন দপ্তরের কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং এলাকার বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “আপনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা শুধুমাত্র এক প্রাণীকেই রক্ষা করেনি, আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার গুরুত্বকেও শক্তিশালী করেছে। আপনাদের এই অসামান্য কাজের জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ!”

গত ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে তিন বছরের জ়িনতকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে (টাইগার রিজ়ার্ভ, সংক্ষেপে বা এসটিআর) আনা হয়েছিল। কয়েক দিন ঘেরাটোপে রেখে পর্যবেক্ষণের পরে রেডিয়ো কলার পরিয়ে ২৪ নভেম্বর তাকে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ছাড়া হয়েছিল। তার পরেই ঝাড়খণ্ডের দিকে হাঁটা দেয় জ়িনত। সেখান থেকে প্রায় সাত দিন ধরে রাজ্যের তিন জেলায় ঘুরে বেড়িয়ে অবশেষে ধরা দিল সে।


আ. দৈ/ আফরোজা 





আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মাদারীপুরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার ৮৯তম জন্ম বার্ষিকী পালন
ফরিদপুরে নানা আয়োজনে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত
ফরিদপুরে টাকা না দেয়ায় ওয়ার্ড বয়দের হেনস্তায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ
গোপালগঞ্জে শহীদ জিয়ার জন্মবার্ষিকী পালিত
ময়মনসিংহে ভয়ংকর রক্ত সিন্ডিকেট
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

রেলওয়ের উন্নয়নে অনুদান দিবে দক্ষিণ কোরিয়া
ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা
থানায় বসে এসআইয়ের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল
‘ঋণখেলাপিরা যাতে বিএনপির মনোনয়ন না পায় সে চেষ্টা করব’
আরাকান আর্মির হাতে টেকনাফমুখী ৩ পণ্যবাহী জাহাজ আটক
বিশেষ সংবাদ- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : [email protected]
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝