বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মন্তব্য করতে পারা ‘অবন্ধুসুলভ আচরণ’ বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শেখ হাসিনার এই ধরনের আচরণ ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কে ‘অস্বস্তি’ তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ভারতের সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ড. ইউনূস।আজ বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) পিটিআই নিউজের ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়।
আন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে। তার আগ পর্যন্ত ভারতে তার মুখ বন্ধ রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন একেবারে তলানিতে। এটি উন্নত করতে হলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারতে অবস্থানকালে সাবেক ওই প্রধানমন্ত্রীর চুপ থাকা উচিত।’
ড. ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেছেন, বাংলাদেশ যতদিন না শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে, ততদিন যদি ভারত তাকে রাখতে চায়, তাহলে শর্ত হতে হবে, তার মুখ বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইলে কী করবে ভারত? কারণ ভারতের জন্য ‘কূটনৈতিক মাথাব্যথা’ হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বলেছি, তাকে (শেখ হাসিনা) চুপ থাকতে হবে। তাকে সেখানে (ভারত) আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সেখান থেকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমন নয় যে, তিনি স্বাভাবিক নিয়মেই সেখানে গেছেন। জনগণের অভ্যুত্থান ও জনরোষের কারণে তিনি পালিয়ে গেছেন।
ড. ইউনূস বলেন, ভারতে বসে শেখ হাসিনা কথা বলছেন এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন, এটি কেউ পছন্দ করছে না,এটি আমাদের জন্য ভালো নয়, ভারতের জন্যও নয়। এ নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে।এ সময় প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে সবার সামনে বিচার করতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থানে কেউ স্বস্তিতে নেই। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে তাঁকে দেশে ফেরত আনতে চাই। তিনি ভারতে থাকছেন এবং একই সময় কথা বলছেন; যা সমস্যা তৈরি করছে। তিনি যদি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা (বিষয়টি) ভুলে যেতাম; লোকজনও ভুলে যেতেন; কারণ তিনি নিজের জগতে থাকতেন। কিন্তু ভারতে বসে তিনি কথাবার্তা বলছেন ও নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। কেউ এটা পছন্দ করছেন না।’
আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, তাঁর চুপ থাকা উচিত। তাঁর কথাবার্তা ও নির্দেশনা আমাদের প্রতি অবন্ধুসুলভ আচরণ। তাঁকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সেখানে থেকে প্রচার চালাচ্ছেন। বিষয়টি এমন নয় যে সেখানে একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গেছেন তিনি। গণ-অভ্যুত্থান ও জনরোষের মুখে তিনি পালিয়েছেন,’ বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ১৩ আগস্ট হাসিনার এক বিবৃতি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে শেখ হাসিনা ‘ন্যায়বিচার’ দাবি করে বলেন, সাম্প্রতিক ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’, হত্যাকাণ্ড ও লুটপাটে জড়িতদের অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করতে ও সাজা দিতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা ছাড়া সবাইকে ‘ইসলামপন্থী’ বলে আখ্যা দেওয়ার বয়ান থেকে ভারতের সরে আসা দরকার। বাংলাদেশ তাঁকে ফেরত আনবে, কেননা জনগণ এটাই চায়।‘হ্যাঁ, তাঁকে ফেরত আনতে হবে, নইলে বাংলাদেশের জনগণ শান্তিতে থাকবেন না। যে ধরনের নিষ্ঠুরতা তিনি দেখিয়েছেন, তাতে এখানে প্রত্যেকের সামনে তাঁর বিচার করা দরকার,’ বলেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূস।
হাসিনার নামে ১১৯ হত্যা মামলা, তাঁর মন্ত্রীরাও আসামি:
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সামনে এগোতে ভারতের জন্য ওই বয়ান থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। এ বয়ান হলো, প্রত্যেকে ইসলামপন্থী, বিএনপি ইসলামপন্থী, বাকি সবাই ইসলামপন্থী আর তাঁরা সবাই এ দেশকে আফগানিস্তানে পরিণত করবেন এবং বাংলাদেশ শুধু শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ। ভারত এমন বয়ানে বিমোহিত। এ বয়ান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ভারতকে। বাংলাদেশ অন্য যেকোনো দেশের মতোই আরেকটি প্রতিবেশী।’
বাংলাদেশে সম্প্রতি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগ এবং এ ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ প্রকাশ সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটি শুধুই একটি অজুহাত।’ এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থাকে এভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরার চেষ্টার বিষয়টি একটা অজুহাত।’
আ. দৈ. /কাশেম