দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহে আবার ঊর্ধমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আগস্ট মাসে ২২২ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এর আগে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মধ্যে জুলাই মাসে গত ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছিল।এরই ধারাবাহিকতায় সদ্য বিদায়ী আগস্ট মাসে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি (২ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ২৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার বেশি।
রোববার (০১ সেপ্টম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র বলেন, ‘এখন প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। তাদের সচেতন করা হচ্ছে। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ বৈধপথে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।’
জানা গেছে, আগস্টে দেশে ২২২ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে এসেছিলে ১৫৯ কোটি ডলার। সেই হিসাবে চলতি বছর একই সময়ে ৬৩ কোটি ডলার বেশি প্রবাসী আয় এসেছে।
জুলাই মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। তবে গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারি ও সাধারণ ছুটি মিলিয়ে গত ১৯ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ ছাড়া টানা ৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও ১০ দিন মোবাইলে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। এ কারণে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈদেশিক লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন গণ–আন্দোলনে রূপ নেওয়ার পর আগস্ট মাসের শুরুতে দেশে সহিংসতা দেখা দেয়। এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। আরও তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হয় এবং ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
গত জুন মাসে ২৫৪ কোটি ডলার আয় দেশে পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা। জুনে দেশে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছিল, তা ছিল একক মাসের হিসাবে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। কোভিড মহামারির সময়ে একপর্যায়ে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যায়। একই সাথে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর রিজার্ভ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে গত বুধবার জানিয়েছেন, দেশের রিজার্ভ এখন কমবে না।
আ. দৈ. /কাশেম/ রমজান