শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫,
৫ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার

শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
অর্থ-বাণিজ্য
৬০টির বেশি পোশাক কারখানা বন্ধ,ফের অস্থিরতার পায়তারা
রমজান আলীঃ
Publish: Friday, 13 December, 2024, 6:14 PM  (ভিজিট : 63)

জুলাই-আগস্টের ধাক্কা কাটিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে দেশের পণ্য রফতানি। এই রফতানি প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে বড় ধরনের স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে সেই তুলনায় চাপমুক্ত হতে পারেননি গার্মেন্ট মালিকরা।

হঠাৎ করে আবার পোশাক শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। সরকার ঘোষিত বাৎসরিক ৪ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট প্রত্যাখ্যান করে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার আশুলিয়ায় কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকরা। এতে তিন দিনে ৬০টির মতো পোশাক কারখানায় বন্ধ রয়েছে উৎপাদন কার্যক্রম। এতে গতকালও ২৫টির মতো কারখানা উৎপাদন বন্ধ রেখেছে।
 
এতে পোশাক খাতের রপ্তানি অর্ডার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্য দেশে চলে যাবে। এমন পরিস্থিতি হলে বিশাল জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে দেশি ও বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে। এর মধ্যে রাজনীতিও ঢুকে পড়েছে। এ সংকট দ্রæত শক্তভাবে প্রতিহত করতে না পারলে দেশের পুরো পোশাকশিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর-আশুলিয়া অঞ্চলে অনন্ত, সব মিলিয়ে ৬০টির মতো কারখানা বন্ধ রাখা হয়।
বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তৈরি পোশাকশিল্প কঠিন সময় অতিক্রম করছে।

 শ্রমিক অসন্তোষের জেরে একদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা শীত ও গ্রীষ্মের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। রপ্তানি আদেশ যাতে অন্য দেশে চলে যায়, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টে হামলা, ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। রাস্তায় বিক্ষোভ করা হচ্ছে। এ বিক্ষোভের সঙ্গে সাধারণ শ্রমিকদের দূরতম সম্পর্কও নেই।

 তিনি আরও বলেন, রপ্তানিমুখী এ শিল্পকে বাঁচাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মালিকদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিকনেতা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হবে।

শ্রমিকদের উদ্দেশে হাতেম বলেন, কারও প্ররোচনায় পড়ে কারখানায় ভাঙচুর চালাবেন না। শ্রমিকদের যে কোনো ন্যায্য দাবি সরকার-শ্রমিক-মালিকরা কারখানার অভ্যন্তরে বসে সমাধানে প্রস্তুত আছে। এসব দাবি কারখানাতেই সমাধান সম্ভব। রাজপথে সমাধান নেই।

বিজিএমইএ-এর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, রেমিট্যান্স ও গার্মেন্ট-এ দুটি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করতে চক্রান্ত শুরু করেছে। বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দিতে শ্রমিক অসন্তোষের পুরোনো নাটক মঞ্চস্থ করতে চাচ্ছে। এ ধরনের দুর্বৃত্তদের দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে।

 তিনি আরও বলেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পোশাক খাতে অর্ডার কমে গেছে। বিদেশি ক্রেতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের ভরসা দিতে সরকারের তরফ থেকে বার্তা দেওয়া উচিত।
শ্রমিকনেতারা বলছেন, বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরা তৈরি পোশাকশিল্পকে অস্থিতিশীল করতে ভাঙচুর চালাচ্ছে। শ্রমিক বিক্ষোভের আড়ালে তারা শিল্পকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ভাঙচুরে নিরীহ শ্রমিকরা জড়িত নন, বহিরাগতরাই এসব করছে। যেসব দাবির কথা বলা হচ্ছে, ৫ আগস্টের আগে সেসব দাবির কথা শোনা যায়নি।

আশুলিয়ার এস. সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড কারখানার মানবসম্পদ এবং কমপ্লায়েন্স বিভাগীয় প্রধান সাইফুদ্দিন মিয়া বলেন, একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে দেশের পোশাক খাতকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যারা বিভিন্ন কায়দায় শিল্পে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে, তারা শ্রমিক না, সবাই বহিরাগত। ৪০-৫০ জন লোক রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

 বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। আমরা শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে কাউন্সেলিং করে কাজে রাখার চেষ্টা করছি। সরকার এবং প্রশাসনেরও উচিত শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়টি দ্রæত সমাধান করা। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন আমাদের কমপক্ষে ৫০ হাজার পিস পোশাক উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। সময়মতো অর্ডারের মালামাল বুঝিয়ে দিতে না পারলে ক্রেতারা আমাদের দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
 
শিল্প পুলিশ জানায়, শ্রমিকরা ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে তারা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন না। পুলিশ সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য কাজ করছে।  

কারখানার মালিকরা জানান, ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর দাবিতে দুপুর ১টা পর্যন্ত আশুলিয়ায় অন্তত ১৪টি কারখানার শ্রমিকরা এলেও কাজ না করে চলে গেছেন। এছাড়া শ্রম আইন ২০০৬ সালের ১৩ (১) ধারায় ৬টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে পাঁচটি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা রয়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর সংখ্যা আরো বাড়তে রয়েছে।

মালিকপক্ষ জানায়, বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় নাসা গ্রæপ, ট্রাউজার লাইন ও আল মুসলিমসহ ছয়টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ ছুটিতে থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউ এইজ গার্মেন্টস, নিউ এইজ অ্যাপারেলস, মেডলার অ্যাপারেলসসহ ব্যান্ডো ডিজাইন।
এছাড়া নিট এশিয়া লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেড, ডেকো ডিজাইন লিমিটেড, শারমীন ফ্যাশন, শারমীন অ্যাপারেলস, ইথিকাল গার্মেন্টস, আগামী ফ্যাশন, ক্রসওয়্যার, ফ্যাশন ফোরাম, মুন রেডিওয়্যার লিমিটেডসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় এলেও কাজ না করে চলে গেছেন।

শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভ‚ঁইয়া বলেন, ১৩টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। এর মধ্যে ১০টি কারখানা কর্তৃপক্ষ জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।  প্রসঙ্গত, একই দাবিতে গত বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯টি কারখানা। এছাড়া ১৫ থেকে ১৬টি কারখানার শ্রমিকরা এলে কাজ না করে চলে গেছেন।

আ. দৈ. /কাশেম /রমজান
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দুদকের মামলায় বিএফআইইউ'র মাসুদ বিশ্বাস কারাগারে,রিমান্ড শুনানি রোববার
সীমান্তে সংঘর্ষ: দুঃখ প্রকাশ করল বিএসএফ
ইসিকে সরঞ্জাম সহায়তা দেবে ইউএনডিপি
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে রিভিউ শুনানি রোববার
বড় জয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদপুরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতারা গন সংযোগে ব্যস্ত
চায়না পোশাকে সয়লাব দেশ
দুদকের মামলায় বিএফআইইউয়ের মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার
দক্ষতা ও নিষ্টার পুরস্কার, দুদকের মহাপরিচালক-পরিচালক পদে পদোন্নতি
রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে: সালাউদ্দিন
অর্থ-বাণিজ্য- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : [email protected]
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝