১৯৭২ সালের প্রনীত সংবিধান সংস্কার এবং 'কেমন সংবিধান চাই' এর খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন শিরোনামে আগামীকাল শনিবার (১৬ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানটি আয়োজক হয়োজক আইন, বিচার, সংবিধান ও মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল' রিপোর্টার্স ফোরাম।
১৯৭২ সাল ষেকে এ পর্যন্ত সংবিধানের ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু জনগণের জন্য সত্যিকার কোন উপকার বয়ে আনেনি সংবিধানের এসব সংস্কার। রাজনৈতিক দলীয় সরকারের স্বার্থেই সংবিধানের সংস্কার বেশি হয়েছে। যারফলে ২০২৪ সালে ছাত্র জনতার অন্দোলনের নতুন করে দেশ আবার স্বাধীন হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে এবার সংবিধানের মৌলিক বিছু সংস্কার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
আইন ও সংবিদান বিষয়ক সিনিয়র সাংবাদিক শহীদুজ্জামানের সভাপতিত্বে 'কেমন সংবিধান চাই'এর খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন সিনিয়র সাংবাদিক সালেহ উদ্দিন।
'কেমন সংবিধান চাই' এবং সংবিধান সংস্কার বিষয়ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন, বাংলাদেশের প্রথম (১৯৭২ সালের) সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বিচারপতি এম এ মতিন, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বিশিষ্ট সাংবাদিক কামাল আহমেদ।
'কেমন সংবিধান চাই' অনুষ্ঠানে গঠনমূলক আলোচক হিসেবে রয়েছেন মানবাধিকার বিষয়ক বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেডআই খান পান্না, ব্যারিস্টার সারা হোসেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রিীয় নেতা সাবেক এমপি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ মামলার বাদী বিচারক মাসদার হোসেন, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ব্যারিস্টার মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান খান, রাজা দেবাশীষ রায়, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, আইন শিক্ষক সাইমী ওয়াদুদ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। ল' রিপোর্টার্স ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিসিনিয়র সাংবাদিক হাসান জাবেদ ও ল' রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন সংগঠনের সদস্যদের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
১৭ বার সংবিধানে সংশোধনী হয়েছে:
জানা যায়, ১৯৭১ সালে টানা ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।এরপর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের প্রথম সংবিধান পায় বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালে ৪ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়। এ পর্যন্ত সংবিধানের ওডর ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। তবে সপ্তম সংসদ বাদে প্রতিটি সংসদেই সংবিধান সংশোধন হয়েছে।
২০১৪ সালে আনা ষোড়শ সংশোধনীতে। ওই সময় ৩৫০টি ভোটের মধ্যে ৩২৭-০ ভোটে সংশোধন বিল পাস হয়।এরআগে সংসদ নেতা হিসেবে শাহ আজিজুর রহমান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও খালেদা জিয়া পৃথক পাঁচটি সংশোধনী বিল পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বাকি বিলগুলো সংশ্লিষ্ট সংসদের আইনমন্ত্রীরাই উত্থাপন করেন। একাদশ, দ্বাদশ, ষোড়শ ও সপ্তদশ সংশোধনীগুলো বিরোধী দলের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
প্রথম সংশোধনী: ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই প্রথম সংশোধনী বিল পাস হয়। এই সংশোধনীটি ছিল যুদ্ধাপরাধীসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা। তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। ২৫৪-০ ভোটে বিলটি পাস হয়। তিনজন ভোটার ওই সময় ভোটদানে বিরত থাকেন। পরে এটি ১৯৭৩ সালের ১৭ জুলাই রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়।
দ্বিতীয় সংশোধনী: ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী বিল পাস হয়। এতে সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদে (২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২) সংশোধন আনা হয়। অভ্যন্তরীণ গোলযোগ বা বহিরাক্রমণে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বাধাগ্রস্ত হলে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার বিধান চালু করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে ২৬৭-০ ভোটে তা পাস হয়। বিলটি পাসের দুই দিনের মাথায় ২২ সেপ্টেম্বর এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়।
তৃতীয় সংশোধনী: বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা নির্ধারণী একটি চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য ১৯৭৪ সালের ২৩ নভেম্বর এ সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন এবং চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময় বিধান প্রণয়ন করা হয়। আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর উত্থাপিত বিলটি ২৬১-৭ ভোটে পাস হয়।
চতুর্থ সংশোধনী: ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো হয়। সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন পদ্ধতি চালু এবং বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন এই সংশোধনীর মূল কথা। আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর সংশোধনীর বিষয়টি উত্থাপন করেন। বিলটি ২৯৪-০ ভোটে পাস হয়।
পঞ্চম সংশোধনী: পঞ্চম সংশোধনী আনা হয় ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক সরকারের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দানসহ সংবিধানে এর মাধ্যমে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করা হয়। সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান উত্থাপিত বিলটি ২৪১-০ ভোটে পাস হয়। পরে এ সংশোধনীটি অবশ্য উচ্চ আদালতের রায়ে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অবৈধ ঘোষিত হয়ে যায়।
ষষ্ঠ সংশোধনী: ১৯৮১ সালের ৮ জুলাই এ সংশোধনী আনা হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ষষ্ঠ সংশোধনীতে সেই পথটাই নিশ্চিত করা হয়। উপ-রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিধান নিশ্চিত করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান উত্থাপিত বিলটি ২৫২-০ ভোটে পাস হয়।
সপ্তম সংশোধনী: ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন বহাল ছিল। ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর জাতীয় সংসদে সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে এরশাদের ওই সামরিক শাসনের বৈধতা দেওয়া হয়। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সামরিক আইন বলবৎ থাকাকালীন সময়ে প্রণীত সব ফরমান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ, নির্দেশ ও অধ্যাদেশসহ অন্যান্য আইন অনুমোদন দেওয়া হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। আইনমন্ত্রী বিচারপতি কে এম নুরুল ইসলাম উত্থাপিত সংবিধান সংশোধনী বিলটি ২২৩-০ ভোটে পাস হয়। ১০ নভেম্বরই এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়। পঞ্চম সংশোধনীর মতো ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট এ সংশোধনীকে আদালত অবৈধ ঘোষণা করা হয়, শেখ হাসিনার সরকারের আমলে।
অষ্টম সংশোধনী: ১৯৮৮ সালের ৭ জুন সংবিধানে অষ্টম সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদে (২, ৩, ৫, ৩০ ও ১০০) পরিবর্তন আনা হয়। রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতিদান করা ও ঢাকার বাইরে ৬টি জেলায় হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করার বিধান চালু করা হয়। Dacca-এর নাম Dhaka এবং Bangali-এর নাম Bangladeshi-তে পরিবর্তন করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ উত্থাপিত এ বিলটি ২৫৪-০ ভোটে পাস হয়।
নবম সংশোধনী: নবম সংশোধনী আনা হয় ১৯৮৯ সালের ১০ জুলাই। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কিছু বিধান সংযোজন করা হয়। এ সংশোধনীর আগে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি যতবার ইচ্ছা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য নির্বাচন করতে পারতেন। এ সংশোধনীর পর অবস্থার পরিবর্তন হয়। রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের সঙ্গে একই সময়ে উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, রাষ্ট্রপতি পদে কোনও ব্যক্তির পর পর দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন সীমাবদ্ধ রাখা হয়। উত্থাপন করেন সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বিলটি ২৭২-০ ভোটে পাস হয়।
দশম সংশোধনী: পাস হয় ১৯৯০ সালের ১২ জুন। রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ১৮০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানের ১২৩(২) অনুচ্ছেদের বাংলা ভাষ্য সংশোধন ও সংসদে নারীদের ৩০টি আসন আরও ১০ বছরের জন্য সংরক্ষণ করার বিধান করা হয়। আইনমন্ত্রী হাবিবুল ইসলাম উত্থাপিত বিলটি ২২৬-০ ভোটে পাস হয়। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৯০ সালের ২৩শে জুন।
একাদশ সংশোধনী: গণঅভ্যুত্থানে এইচ এম এরশাদের পতনের পর বিচারপতি মো. সাহাবুদ্দিনের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে ১৯৯১ সালে ৬ আগস্ট এ সংশোধনী পাস হয়। এর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগদান বৈধ ঘোষণা করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে যাবার বিধান পাস করানো হয় এই সংশোধনীতে। আইনমন্ত্রী মির্জা গোলাম হাফিজ উত্থাপিত বিলটি ২৭৮-০ ভোটে পাস হয়। এ বিলটি সরকারি ও বিরোধী দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে পাস হয়। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ১০ আগস্ট।
দ্বাদশ সংশোধনী: ১৯৯১ সালের ৬ আগস্টের এ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৭ বছর পর দেশে পুনরায় সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত করা হয়। সংশোধনীটি উত্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ৩০৭-০ ভোটে বিলটি পাস হয়। একাদশের মতো এ বিলটিও সরকারি ও বিরোধী দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে পাস হয়। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর।
ত্রয়োদশ সংশোধনী: ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ-নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী জমির উদ্দিন সরকার এই সংশোধনীটি উত্থাপন করেন। এটি ২৬৮-০ ভোটি পাস হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ২৮ মার্চ। উচ্চ আদালতের আদেশে ২০১১ সালে এই সংশোধনীটি বাতিল হয়।
চতুর্দশ সংশোধনী: ২০০৪ সালের ১৬ মে এ সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসন ৩০ থেকে ৪৫টি করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৬৭ বছর করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং সরকারি ও আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি বা ছবি প্রদর্শনের বিধান করা হয়। আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ উত্থাপিত বিলটি ২২৬-১ ভোটে এটি পাস হয়। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ১৭ মে।
পঞ্চদশ সংশোধনী: সংবিধান আইন ২০১১ (পঞ্চদশ সংশোধনী) পাস হয় ২০১১ সালের ৩০ জুন এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ২০১১ সালের ৩ জুলাই। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতিও দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়, জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়। সংবিধানে ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭ (ক) ও ৭ (খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধানবহির্ভূত পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করা হয়। এই সংশোধনীর বিষয়টি উত্থাপন করেন সেই সময়ের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ। বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২৯১-১ ভোটে বিলটি পাস হয়।
ষোড়শ সংশোধনী: ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে এই সংশোধনী আনা হয়। ৭২ এর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিধান পাস করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। এটি উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৩২৭-০ জনের ভোটে সর্বসম্মতভাবে পাস হয় বিলটি।
সপ্তদশ সংশোধনী: ৮ জুলাই ২০১৮ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের বিধি আরও ২৫ বছর বহাল রাখার প্রস্তাব সংবলিত সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। সংসদের ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৯৮-০ ভোটে বিলটি পাস হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ২৯ জুলাই ২০১৮ এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়।
আ. দৈ./ কাশেম