ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র্যালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আগামীকাল শুক্রবার (০৮ নভেম্ববর) দুপুর আড়াইটায় এই র্যালি শুরু হবে। বর্ণাঢ্য এই র্যালি স্মরণকালের সেরা এবং সর্ববৃহৎ হবে বলে ইতিমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) দলের সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, র্যালিটি বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল-কাকরাইল মসজিদ-মৎস্যভবন-ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-শাহবাগ-হোটেল শেরাটন-বাংলামোটর-কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে শেষ হবে। কর্মসূচিতে দলের জাতীয় নেতারাসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থককে যথাসময়ে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঢাকার পাশাপাশি ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে বিভাগীয় শহরগুলোতে র্যালি অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন।
এর আগে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল ৩টায় র্যালিটি শুরু হবে। র্যালি শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বলবেন।
এদিকে ৭ নভেম্বরকে জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন আখ্যা দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে সিপাহী-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা ও হারানো গণতন্ত্র পুণরুজ্জীবনের অভূতপূর্ব অঙ্গীকার নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত। স্বাধীনতাত্তোর রাষ্ট্রীয় অনাচার, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, তৎকালীন ক্ষমতাসীন মহল নিজ স্বার্থে জাতীয় স্বাধীনতাকে বিপন্ন ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে আধিপত্যবাদের থাবার মধ্যে দেশকে ঠেলে দেয়। শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্যই গণতন্ত্রবিনাশী কর্মকান্ড শুরু করে। সেইজন্য মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যার মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়। শুরু হয় নির্মম একদলীয় দুঃশাসন। দেশে নেমে আসে অশান্তি ও হতাশার কালো ছায়া। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদীপন্থায় মানুষের ন্যায়সংগত অধিকারগুলোকে হরণ করে।
তিনি বলেন, দেশমাতৃকার এই চরম সংকটকালে ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর কুচক্রীরা মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে। এই অরাজক পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় সৈনিক এবং জনতার ঢলে রাজপথে এক অনন্য সংহতির সম্মিলন ঘটে এবং জিয়াউর রহমান মুক্ত হন। এই পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী স্বত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। আধিপত্যবাদী শক্তির এদেশীয় অনুচররা উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নির্মমভাবে হত্যা করে। জিয়া শাহাদাত বরণ করলেও তার আদর্শে বলীয়ান মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনও ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
তিনি বলেন, আবারো বিদেশী শক্তির দোসর আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা প্রায় ১৬ বছর রাষ্ট্রক্ষমতাকে জোর করে আঁকড়ে ছিল। এদের নতজানু নীতির কারণেই দেশের সার্বভৌমত্ব দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। গোপন চুক্তি সম্পাদন করে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রভূত্ব কায়েমের বেপরোয়া কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছিল। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াকু নেতা-কর্মীদেরকে বিভৎস নির্মমতায় দমন করেছে, আয়নাঘরসহ গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার এক ভয়াল দুঃশাসন কায়েম করে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে নির্দয় শাসনের যাঁতাকলে পৈশাচিকভাবে পিষ্ট করেছে। আর নির্যাতনের এই অব্যাহত ধারায় ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বহু বছর মুক্তি দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার মহিমান্বিত আত্মদানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিষ্টরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের মুক্তির পথ প্রসারিত হয়েছে। এখন চূড়ান্ত গণতন্ত্রের চর্চার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনসহ গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিষ্টদের নতজানু নীতির কারণেই আমাদের আবহমানকালের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর চলেছিল বাধাহীন আগ্রাসন। তাই আমি মনে করি ৭ নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের পথচলাকে অবারিত এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মূহূর্তে অত্যন্ত জরুরী। তারেক রহমান এই দিনে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
এদিন বেলা ১১টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা. জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ শ্রদ্ধা জানান দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সবাই যদি তাদেরকে (অর্ন্তর্বতী সরকার) সহযোগিতা করি তাহলে জাতির সামনে যে চ্যালেঞ্জ আছে তা পূরণে সক্ষম হবে। বিএনপি তার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে শপথ নিয়েছি-জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আধিপত্যবাদকে রুখে দিয়ে স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখবো, সংগ্রাম ও আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছিল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম-খুন করেছে। ৬০ লাখের বেশি মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে তারা। বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নির্যাতন নিপীড়ন করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিলো কিন্তু আল্লাহর রহমতে ৫ আগস্ট তৃতীয়বারের মতো এই ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের আধিপত্যবাদকে পরাজিত করতে পেরেছি।
আ. দৈ. / কাশেম/ এআর