আজ মেহেরপুর মুক্ত দিবস-৬ ডিসেম্বর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত হয়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল মেহেরপুরবাসী। আজ সেই ঐতিহাসিক দিনের ৫৪ বছর পূর্তি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ভূমি মুজিবনগরসহ পুরো জেলায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে দিনটি। দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি, পুষ্পমাল্য অর্পণ ও আলোচনা সভায় স্মরণ করা হলো বীর শহীদদের।
আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে শহীদ শামসুজ্জোহা পার্ক থেকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র্যালির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে শহীদদের গণকবর ও স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। রাষ্ট্রের পক্ষে জেলা প্রশাসক ড. সৈয়দ এনামুল কবির প্রথমে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার শামসুল আলম সোনা ও অতিথিবৃন্দ পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
সকাল ১০টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক ড. সৈয়দ এনামুল কবির ও পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায়। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য সচিব সাদেক আহমেদ খান, কেন্দ্রীয় কমান্ডের সদস্য আব্দুল্লাহিল শাফি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব শামসুল আলম সোনা। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি চৌকস সেলামি প্রদর্শন করা হয়।
পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হলে তা এক মিলনমেলায় রূপ নেয়।
মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল আলম সোনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. সৈয়দ এনামুল কবির। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ হিল মাসুম সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ হিল-সাফি, কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ আল-মামুন এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেছউদ্দীন।
বক্তারা বলেন, ৬ ডিসেম্বর শুধুমাত্র একটি দিবস নয়- এটি আমাদের গৌরব, আত্মমর্যাদা ও বীরত্বের প্রতীক। স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে সব শহীদ জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের প্রতি আজ জাতি চিরঋণী। তারা আরও বলেন, মেহেরপুর মুক্ত দিবসের চেতনাকে ধারণ করে দুর্নীতি, মাদক, সাইবার অপরাধসহ সব অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা এখন আমাদের দায়িত্ব।
বক্তারা মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের মর্যাদা রক্ষায় রাষ্ট্রের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে জোর দেন। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও অতিথিবৃন্দের উপস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
আ. দৈ./কাশেম