সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫,
৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
জাতীয়
ফাঁসি দেখতে চাই আমার ছেলের হত্যাকারীদের: আবু সাঈদের বাবা
নিজেস্ব প্রতিবেদক
Publish: Monday, 17 November, 2025, 6:26 PM  (ভিজিট : 55)

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে শহীদ আবু সাঈদের পরিবার।

রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরা পলাতক শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামিদের দ্রুত দেশে এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানান।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, আমি রায়ে খুশি কিন্তু বিচার দেখতে চাই। আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ আমার ছেলেকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে। আমি হুকুমদাতাসহ পুলিশের বিচার চাই। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। হত্যা করার অনুমতি দিয়েছিল বলেই আমার ছেলের মতো হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে হাত পা হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছেন। কারও কারও চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতালে এখনো অনেকে কাতরাচ্ছে। ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটিতে নিয়ে এসে রায় কার্যকর করতে হবে।  

আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা সবার বিচার চাই। যারা হুকুম দিয়েছে, যারা গুলি করেছে সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে। আমি মা, আজ বুঝতে পারছি ছেলে হারানোর কষ্ট। আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আমার মতো অনেক মা, বোন, ভাই সন্তান হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে। অনেক জীবন সংসার শেষ হয়ে গেছে। এসবের বিচার হতে হবে। 

আবু সাঈদের বড়ভাই আবু হোসেন বলেন, শুধু রায় ঘোষণা করলে হবে না বিচার কার্যকর করতে হবে। শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দীর্ঘদিন স্বৈরাচারি সিস্টেমে গুম খুন করেছে। জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতাকে নির্মমভাবে গণহত্যা করে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। আজ প্রথম রায় হয়েছে। শুধু রায় নয়, এটি কার্যকর করতে হলে শেখ হাসিনাকে এই দেশের মাটিতে এনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না। 

আবু সাঈদ হত্যা মামলার বাদী ও আরেক বড়ভাই রমজান আলী বলেন, আবু সাঈদকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্ব দেখেছে। প্রকাশ্যে পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। সেই ভিডিও ফুটেজ সবাই দেখেছে। এটা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তাদের নির্দেশ পেয়ে পুলিশ সাহস করে গুলি করে আবু সাঈদকে শহীদ করে দিয়েছেন।  

তিনি আরও বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা বুঝতেছেন ভাই হারানো, বোন হারানো, মা হারানো, স্বামী হারানো কত যন্ত্রণার। আমরা এমন বিচার দেখতে চাই, খুনিরা যে দেশেই পালিয়ে থাকুক তাদের ধরে এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। তাদেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে বাংলার মানুষকে দেখাতে হবে এমন স্বৈরাচারের বিচার কী হতে পারে।  


প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আবু সাঈদের গ্রামের স্থানীয়রা জানান, শেখ হাসিনাসহ এসব হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আমরা রায়ে খুশি, কিন্তু তা যদি কার্যকর না হয় তাহলে সবকিছুই বৃথা যাবে। যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তার জন্য প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত। শুধু তাই নয়, রায়ের পর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সারাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে শহীদ ও আহতসহ জুলাই যোদ্ধারা সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া কিংবা পুনর্বাসন করা যাবে না। 

প্রসঙ্গত, সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পাশাপাশি এই মামলার অন্য আসামি হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক।

এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।

এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ, নিরস্ত্র দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং ৩০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই পাঁচ অভিযোগ হলো, উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। ১৭ জুলাই পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাকে। আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে গুলি করার দৃশ্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে সারাদেশে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। 

আ.দৈ/আরএস

   বিষয়:  আমার   ছেলের   হত্যাকারীদের   ফাঁসি   দেখতে   চাই   আবু সাঈদের   বাবা  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

হাসিনার রায়ের পর ডাকসু এজিএস শেয়ার করলেন কাদের মোল্লার চিঠি
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত
সাবেক এমপি হাবিব হাসানের ভাইয়ের বাড়িতে হামলা ও আগুন
আমার মা ভারতে নিরাপদে আছেন, তার কিছুই হবে না: জয়
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়, ফরিদপুরের সালথায় আনন্দ মিছিল
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আর মেগা প্রজেক্ট থাকবে না, স্কিল ডেভেলপমেন্টকে গরুত্ব দেবে বিএনপি : আমীর খসরু
ফরিদপুরে স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামী সোহানের মৃত্যুদণ্ড
গাংনীতে উপজেলা বিএনপির মিছিলের নগরী
‘কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে ৪ কর্মসূচি খতমে নবুওয়তের
শাকিব খানের নতুন ছবি ‘প্রিন্স’-এ নায়িকা হিসেবে ফারিণের চুক্তিবদ্ধ সম্পন্ন
জাতীয়- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাসুদ আলম
প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝