দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, এখনই দুর্নীতি একেবারে শেষ করা কিংবা নির্মূল করতে পারবো এমন প্রত্যাশা করি না। তবে প্রত্যাশা আছে দুর্নীতি দ্রুত কমানোর। এটা স্বীকার করতে হবে, আমরা সবাই চাইলে দুর্নীতি দ্রুত কমানো সম্ভব।
আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদকের ১৮৭তম গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। গণশুনানিতে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। গণশুনানিতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানীর শিকার বা সেবা বঞ্চিত সংক্ষুব্ধ জনসাধারণ তাদের অভিযোগসমূহ যশোর জেলার সকল সরকারি দপ্তর প্রধানদের উপস্থিতিতে কমিশনের সামনে তুলে ধরেন।
একই সাথে সেবা বঞ্চিত জনসাধরণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। একই সাথে সেবা বঞ্চিত জনসাধরণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মোট ১০৪টি অভিযোগের মধ্যে দুদকের তফসিল ভুক্ত ৭৫ টি অভিযোগের শুনানি হয়। যার মধ্যে ১০ টি অভিযোগ অনুসন্ধানে নেয়া হয় ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন,"আজকে যারা এসছেন এর মধ্যে দুইটা ভাগ। একটা হচ্ছে সেবাদাতা যারা মূলত সরকারি অর্থে লালিতপালিত। আরেকটা অংশ হচ্ছে সেবাগ্রহীতা। এটাই হচ্ছে বড় অংশ। তারা সরকারের আনুগত্য খুব কমই পেয়ে থাকেন। কষ্ট করে জীবন ধারণ করেন এবং তাদের এই কষ্টার্জিত অর্থের কিছু অংশ কর হিসেবে সরকার নিয়ে নেয়। সেটা দিয়ে আমাদের বেতন।
গণশুনানি প্রসঙ্গে বলেন, "আমরা কিন্তু জনগণকে কর্মকর্তাদের মুখোমুখী করে দিচ্ছি না। আমরা করে দিচ্ছি সম্পৃক্ত। সম্পৃক্ত করে দেয়ার লাভটা হচ্ছে পরস্পর পরস্পরের কাছে যে এক্সেস সেই এক্সেসটা পাওয়া। আমরা যখন যশোর থেকে চাকরি জীবন শেষ করে অন্যত্র বদলি বদলি হয়ে চলে যাব কিংবা চাকরি জীবন শেষ হয়ে যাবে অন্যত্র চলে যাব যাবার সময় যদি দেখি যশোরের মানুষের চোখের কোনায় একটু অস্ত্রবিন্দু নেমে এসেছে তাহলে তখন বলব যে আমি বোধহয় জনগণের সাথে মিশে গিয়েছিলাম। আমি বোধহয় জনগণকে কিছুটা হলেও সেবা দিতে পেরেছি। আর আমি চলে যাওয়ার সময় যদি হাততালি পড়ে তখন বুঝতে হবে যে আসলে জনগণ আমাকে চায়নি। আমি গায়ের জোরে একদিন আমি এখানে ছিলাম।"
সেবা দাতাদের উদ্দেশ্য বলেন, "আমি আজকে শুধু কাজ করলাম আমার এসিআর লিখিত হলো রাষ্ট্রকে জবাব দিলাম এবং সবশেষে এটা মাথায় রাখতে হবে আমার যে বিবেক আমার বিবেকের কাছে তো আমার জবাব দিতে হবে।"
সাংবাদিকদের উদ্দ্যেশ্য তিনি বলেন, "প্রেস ম্যানরা হচ্ছে হুইসেল ব্লোয়ার। আমরা দুদকের যত মামলা মোকদ্দমা বিভিন্ন সময় আমরা নাড়াচাড়া করি অনুসন্ধান করি, তদন্ত করি, মামলা তৈরি করে আদালতে পেশ করি; আমি হিসেব করে দেখেছি তার ৫০ শতাংশের বেশি আছে যারা প্রেসম্যান, তাদের দেওয়া সংবাদকে। এখন সেই সংবাদ যথার্থ কিনা সেটা একসময় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর প্রমাণিত হয়।"
বিশেষ অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ”জঙ্গলের আইন তো সভ্যতার আইন হতে পারে না। তাই দানবের গুণ মানুষের মধ্যে থাকতে পারে না। কিন্তু আজকের আমাদের এইখান আজকের যে আলোচ্য বিষয়, যে কারণে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি অন্তত কিছু মানুষ তো তাদের প্রাপ্য ন্যাজ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কেন হয়েছেন সেটাই আজকের আলোচনার বিষয়। আর যেন না হন। আপনারাও আশা করি এটাকে নিজেদের কর্তব্য হিসেবে মেনে নিয়ে এই ফল ত্যাগ করবেন।
তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধ প্রসঙ্গে বলেন, "আমরা চেষ্টা করছি যে দুর্নীতি যাতে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। সমাজের সর্বস্তরে দেখা যাচ্ছে যে যারা যতটুকু প্রাপ্য সেখান থেকে তাকে বঞ্চিত করতে পারাটাই যেন বাহাদুরি। আর এমন বাহাদুরি চলতে দেয়া যায় না।কাজেই আমরা খেয়াল রাখব যে আমরা যেন যে দপ্তরেই কর্মসম্পাদন করি না কেন, যেন দুর্নীতি নিজে করব না, অন্যের দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দেব না। "
মূল্যবান উপহার না নেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, "অতি সম্প্রতি আমরা আরেকটা বিষয়ের দিকে এগতে যাচ্ছি সেটা হচ্ছে নো গিফট। এই নো গিফ এই এই চর্চাটা আমরা এখন থেকে করব। অতিথি আসলে আমরা তাকে আদর আপ্যায়ন করি। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বার্থের সংশ্লিষ্টতা আছে সেই ক্ষেত্রে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করব। এমন উপহার গ্রহণ করবো না যা আমাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করে।"
আ. দৈ./ কাশেম