আজ (সোমবার) ১৩ অক্টোবর ২০২৫ইং বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশী বিহারী পুণর্বাসন সংসদ (বিবিআরএ) এর উদ্যোগে জুলাই সনদে বিহারীদের অবদানের কথা অন্তর্ভূক্তি ও অবিলম্বে পুনর্বাসনের দাবিতে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিগত ০২.০১.২০০৬ইং তারিখে বাংলাদেশী বিহারী পূণর্বাসন সংসদ (বিবিআরএ) ঢাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিকট নিম্ন লিখিত ৭ দফা দাবি দাখিল করেছে। দাবি সমূহ হল: ১) নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাঁধাসমূহ দূর করা ২)বাসস্থান হিসেবে যিনি যে ক্যাম্পে আছেন তাকে সেখানেই এলটমেন্ট/বরাদ্দ দেয়া ৩) বাসা বা এপার্টমেন্ট দেয়ার দু'বছর পর পর্যন্ত গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ফ্রি ভাবে সরবরাহ অব্যাহত রাখা ৪) বাসার এলটমেন্ট দলিল হস্তান্তরের সময় প্রতি পরিবারকে কমপক্ষে ৩ লক্ষ টাকা সাহায্য প্রদান ৫) প্রতি পরিবার হতে কমপক্ষে দু'জন কর্মক্ষম যোগ্য পুরুষকে বিদেশে চাকুরীতে প্রেরণ ৬) ৩৫ বছর পর্যন্ত বিহারী ছেলে-মেয়েদের স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত সরকারী খরচে লেখা পড়ার ব্যবস্থা ৭) ক্যাম্পের বাইরে বসবাসরত উপযুক্ত বিহারীদের মাঝে শিল্প প্লট বরাদ্দ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান।
আমাদের আন্দোলন ও দেশবাসীর অকুন্ঠ সমর্থনে দেশপ্রেমিক সেনাবহিনী নির্বাচন কমিশনের সহোগীতায় দেশব্যাপী ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষী বিহারী জনগোষ্ঠীকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে। সমাজের মূল স্রোত ধারায় মিশে যাওয়ার প্রদান বাঁধা দূর হলেও এখনো বিহারীরা মানবেতর ভাবে তাদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পে বসবাস করছে। কোন সরকারই রহস্যজনক কারনে বিহারীদের পূণর্বাসন না করে ক্যাম্প রক্ষনাবেক্ষনের নামে লাখ লাখ কোটি টাকা অপচয় করছেন। বিহারী নেতৃবৃন্দ অভিলম্বে সরকারকে অপচয় বন্ধে বিহারীদের পূনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।
মিরপুর-১০, মিরপুর-১২ এর কালশী হতে ইসিবি চত্তর, মোহাম্মাদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মোমেনশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সৈয়দপুর এলাকায় ছাত্র জনতার সাথে জুলাই বিপ্লবে বিহারীগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খুনী লীগের পতন ঘটিয়েছে কিন্তু কেহই তাদের অবদানের কথা মুখে আনছেন না। জুলাই সনদে উর্দুভাষী বিহারীদের ত্যাগ ও অবদানের কথা তুলে ধরার জন্য বিবিআরএ এর নেতৃবৃন্দ সমাবেশ হতে দাবী জানিয়েছে।
জনগণের টাকা অপচয় না করে উপেক্ষিত উর্দুভাষী বিহারীদের পূণর্বাসনের সাথে সাথে তাদের মাঝে ব্যাপক শিক্ষ বিস্তারের জরুরি প্রকল্প গ্রহনের দাবী করেছেন বিহারী বক্তারা। গত ১৮.১০.২০২৪ইং তারিখে পূণর্বাসনের দাবিতে শাহবাগে সমাবেশ ও মিছিল করলেও সরকারের পক্ষ হতে নিরবতা পালন করায় বিহারী নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মহামান্য হাইকোর্টে বিহারীদের পূণর্বাসন বিষয়ে ৩টি রিট মামলা থাকলেও অদ্যবধী সরকার কোন জবাব না দেয়ায় সমাবেশে বিহারীরা বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নির্বিচারে নিরহ মানুষ হত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রয়োজনে সীমান্তে ভাড়ায় টার্কিশ বা চাইনীজ সৈন্য নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন বিহারী নেতৃবৃন্দ। বিবিআরএ এর সমাবেশ হতে পাহাড়ী জেলায় রাতের আঁধারে সেনা হত্যার নিন্দা করেছেন এবং তারা ইন্ডিয়ান পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন ও নির্মুলের আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকার মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্প হতে যে সকল বিহারী আওয়ামী লীগের দালালি করেছে ও হত্যা মামলার আসামি তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার না করায় বিবিআরএ এর সমাবেশ হতে সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। পল্লবীর বিহারী ক্যাম্পে পানির কষ্টের জন্য বিহারী নেতৃবৃন্দ ঢাকা ওয়াসার দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন।
বিহারীদের পুনর্বাসনে দেশের আলেম সমাজ, পেশাজীবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান অতিথি নেয়াজ আহমদ খান।
আজকের কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশী বিহারী পূনর্বাসন সংসদ (বিবিআরএ) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ কাওসার পারভেজ ভুলু। প্রধান অতিথী ছিলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ (ন্যাপ বাংলাদেশ) এর মহাসচিব ও বাংলাদেশী বিহারী পুনর্বাসন সংসদ (বিবিআরএ) এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক নেয়াজ আহমদ খান। আরো বক্তব্য রাখেন বিবিআর এর সহসভাপতি মোঃ জাহিদ, কুতুবুদ্দীন শাহ্, মোহাম্মদ রাজু, আরমান দিল্লিওয়ালা, মোঃ সাবান, মাহাতাব ভাসানী, আবরার আলী মনা, মোহাম্মদ সাব্বির, ফয়সাল, আনিসুর রহমান বেচু, মো. সনু, সীমা বেগম, নান্নু মহাজন, আব্দুল মজিদ, জুলাই আন্দোলনে আহত জাবেদ প্রমুখ।