রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫,
২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
অর্থ-বাণিজ্য
হাতবদলে দাম বাড়ে ৪ গুণ
সবজি কিনতেই হিমশিম, নাজেহাল ক্রেতারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Friday, 10 October, 2025, 2:11 PM  (ভিজিট : 47)

রাজধানীর বাজারে সবজির দাম এখন আকাশছোঁয়া। কৃষক থেকে রাজধানীর খুচরা বাজারে পৌঁছতে প্রায় চার গুণ দাম বেড়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন হাতবদল, চাঁদাবাজি ও বাজার তদারকির দুর্বলতায় কৃষক থেকে দামের এই পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি সবজি ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিপ্রতি একশ’র বেশি।

ভারী বৃষ্টি ও সরবরাহ কম থাকায় গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহেও ঘাটতি তৈরি হয়। এতে গত সপ্তাহে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ২০—৩০ টাকা বেড়ে যায়। সপ্তাহ শেষে সেই দাম কিছুটা কমেছে। তবে সার্বিকভাবে সবজির বাজার চড়া। বেশি দামে সবজি কিনতে গিয়ে অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন কমলাপুর কাঁচাবাজারে ক্রেতা রহিম বলেন, বাজারে সব জিনিসের দামই বেশি। সবচেয়ে বেশি সবজির দাম। একমাত্র পেঁপে ছাড়া ৮০—১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যায় না। বেগুনের দামে তো আগুন লেগেছে। আমাদের মত স্বল্প আয়ের মানুষদের কথা কেউ ভাবে না। সরকারের বাজার পরিস্থিতি দেখার কোনো লোক আছে বলে মনে হয়না।

রামপুরা বাজারে ক্রেতা মাহমুদ বলেন, আগে এক হাজার টাকার বাজার করলে এক সপ্তাহ চলে যেত। এখন দেড় হাজার টাকায়ও সপ্তাহ পার হতে চায় না। চার পদের সবজি কিনতেই ৩০০ টাকা শেষ হয়ে যায়।

রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মাহমুদ হাসান জানান, বাজার থেকে এক কেজি করে বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা ও পেঁপে কেনেন। এই চার পদের সবজি কিনতে তাঁর মোট খরচ হয় ৩২০ টাকা।

সবজির অত্যধিক দামের কারণে ক্রেতারা তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছে না। ক্রেতারা বলেছে, কিছু দিন আগেও যে সবজি ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, এখন তা ১২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, বাড্ডা, রামপুরা ও জোয়ারসাহারা খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ১০০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

অথচ এই দুই দিনে বগুড়ার মহাস্থান হাটে কৃষকরা পাইকারিতে প্রতি কেজি বেগুন মানভেদে ২৭ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করেন। পাবনার বাজারে বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মেহেরপুর বাজারে ৭০ টাকা ও নরসিংদীর বাজারে ৭০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।

রাজধানীর বাজারে শীতের আগাম সবজি শিম প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও মহাস্থান হাটে কৃষকরা পাইকারিতে শিম বিক্রি করছেন মানভেদে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি করে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এসব করলা বগুড়ার কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩২ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নরসিংদী, পাবনা ও মেহেরপুরের পাইকারি বাজারে এসব করলা ৫০ থেকে ৬৫ টাকা।

রাজধানীতে খুচরায় বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। রাজধানীর খুচরা বাজারে পটোল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। বগুড়ার কৃষক পর্যায়ে পটোলের কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ঝিঙা ৯০ থেকে ১০০ টাকা। বগুড়ায় কৃষকরা পাইকারিতে প্রতি কেজি ঝিঙা ৩০ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি করছেন।

রাজধানীতে ঢেঁড়সের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। মহাস্থান হাটে কৃষকরা এটি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করছেন। রাজধানীর বাজারে মিষ্টি কুমড়াও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মিষ্টিকুমড়া ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। লম্বা লাউ রাজধানীর খুচরা বাজারে আকারভেদে প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা। মহাস্থান হাটে প্রতি পিস লম্বা লাউ ১৫ থেকে ২৫ টাকা এবং পাবনা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন বাজারে ৩০ থেকে ৪২ টাকা।

একাধিক হাতবদলে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. হাবিব বলেন, কৃষকরা প্রথমে সবজি তাঁদের স্থানীয় বাজারগুলোতে নিয়ে আসেন। স্থানীয় বাজারগুলোতে ফড়িয়া বা পাইকারদের সিন্ডিকেট থাকে। তারা সবাই মিলে একটা দাম নির্ধারণ করে দেয়। সেই দামে কৃষকদের থেকে মণ হিসেবে তারা কিনে নেয়। পরে ট্রাক বা পিকআপে করে রাজধানীতে আসে সবজি। রাজধানীতেও কয়েক হাতবদল হয়ে খুচরা বিক্রেতাদের হাতে যায়। এভাবে কয়েকটি হাতবদলে মূলত সবজির দাম বাড়ে।

তিনি বলেন, কৃষকদের সঙ্গে যদি সরাসরি রাজধানীর বিক্রেতাদের যোগাযোগ থাকত, তাহলে হাতবদল কমে পণ্যের দামও অনেক কমে যেত। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হতো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ—পরিচালক কৃষিবিদ সোহেল মো. শামসুদ্দিন ফিরোজ জানান, প্রান্তিক কৃষকরা প্রায় সব সময় বঞ্চিত হচ্ছেন। উৎপাদন ও পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে কৃষি অধিদপ্তর যেমন ‘কৃষক গ্রুপ’ করেছে, তেমনি কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পাইয়ে দিতে ‘কৃষি বিপণন’কে গ্রুপ করা প্রয়োজন। কৃষি বিপণনকে অনলাইন ও অফলাইন দুটিতেই শক্তিশালী করাসহ বাজার ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করতে হবে।

এ বিষয়ে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্য রাজধানীর মানুষ চড়া দামে কিনলেও সেই ফসলের ন্যায্যমূল্য তারা পাচ্ছে না। পণ্য কৃষকের কাছ থেকে ব্যাপারী ও পাইকারি আড়তদার হয়ে খুচরা বিক্রেতার কাছে যায় এবং তা পরিশেষে ভোক্তার হাতে পৌঁছায়। বাজারের প্রতিটি ধাপে কৃষকের ন্যায্য প্রাপ্য কেটে নেওয়া হয়। মাঝখানে ফুলেফেঁপে উঠছে অদৃশ্য এক অতি শক্তিশালী গোষ্ঠী, যারা বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে পরিচিত।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, আমাদের বিপণনব্যবস্থায় প্রধান সমস্যা হচ্ছে একদিকে কৃষক তাঁর ন্যায্য দাম পান না, অন্যদিকে ভোক্তাদের অতিরিক্ত দাম দিয়ে ভোগ্য পণ্য কিনতে হয়। মূলত বর্তমান বাজারব্যবস্থার কারণে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই ঠকছে, লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।



আ.দৈ/ওফা

   বিষয়:  নাজেহাল ক্রেতারা   সবজি   দামে চড়া   সবজির দাম  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

শার্শায় পল্লীতে কবরস্থান থেকে ৬টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার
ট্রাইব্যুনালে সেনা মোতায়েন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি
দাউদ ইব্রাহিমের পার্টিতে দুই বলিউড তারকা, নোরা ও শ্রদ্ধা পুলিশের নজরে
সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪, আহত ১৬
আগুন-ককটেল হামলাকারীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিলেন ডিএমপি কমিশনার
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

সাঈদ খোকনসহ ৩জনে বিরুদ্ধে ৫৪ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা দুদকের
ফরিদপুরে স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামী সোহানের মৃত্যুদণ্ড
আর মেগা প্রজেক্ট থাকবে না, স্কিল ডেভেলপমেন্টকে গরুত্ব দেবে বিএনপি : আমীর খসরু
রাজশাহীতে বিচারকের বাসায় ঢুকে ছুরিকাঘাতে ছেলেকে হত্যা
ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে পরিস্থিতি স্বাভাবিক যান চলাচল শুরু,
অর্থ-বাণিজ্য- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাসুদ আলম
প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝