ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের নানা উদ্যোগ,উন্নয়নমূলক সুন্দর সুন্দর প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন সত্বেও এই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা বেড়েই চলছে। এর পেছনে মূলকারণ হলো, দীর্ঘমেয়াদী, সমন্বীত ও পরিকল্পিত টেকসই প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের অভাব। যারফলে ঢাকা শহরের জলবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।
অনেকে মনে করেন,শুরু থেকেই অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং গড়ে উঠেনি সুষ্ঠু ড্রেনজ ব্যবস্থা। দীর্ঘমেয়াদী ড্রেনেজ ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ না করায়, রাজধানীতে জলাবদ্ধতা ক্রমেই বাড়ছে। চলতি আশ্বিন মাসের একটুভারী বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার কবলে নগরবাসী। ময়লা পানিতে ডুবছে নগরীর নিম্মাঞ্চলসহ অনেক উচু এলাকার রাস্তা ও গলিপথ।
আজ বৃহস্পতিবারের মাঝারি বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে ঢাকা দুই সিটির পথঘাট-অলিগলি। নগরবাসী অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। নগরবাসীর ভাগোন্তি ক্রমেই বাড়ছে। এবার আশ্বিন মাসের বৃষ্টিতেই ডুবছে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক,গলিপথ এবং নগরীর নিম্মাঞ্চল।
এই পরিস্থিতিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম ‘আজকের দৈনিক পত্রিকাকে’ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে তারা পাম্পের সাহায্যে পানি সেচা হচ্ছে। একই সাথে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ড্রেনের মুখে জমে থাকা পলিথিন,আর্বজনা পরিস্কার করছেন। তিনি বলেন, এবার জলবায়ু পরিবর্তান,মৌসুমি বায়ুর প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন মেয়াদী থেমে থেমে কখনো হালকা, আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ড্রেনগুলো অনেক স্বরু ও ছোট ছোট। সেই সাথে পলিথিন ও নগরবাসীর ব্যবহ্নত রাস্তায় ফেলে রাখা আর্বজনায় ড্রেনগুলো দ্রুত ভরে যায়।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পাম্পের সাহায্যে বৃষ্টির জমাট বাধা পানি দ্রুত সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।তবে এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়, বলে জানিয়েছে তিনি। তিনি বলেন,আগামীতে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য সমন্বীত উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। বর্তমানের তিনটি আউট লেটের মাধ্যমে পানি সরানো হচ্ছে। আগামী কমপক্ষে ১০ টি আউটলেট নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ড্রেনগুলো পরিস্কার করার পরও নগরীর অধিকাংশ ড্রেন দ্রুত ভরাট হয়ে যায়, এরকারণ হলো নগরবাসীর ব্যবহ্ন পলিথিন, প্লাস্টি,বাসাবাড়ির ফেলে দেওয়া আর্বজনা। তিনি জলাবদ্ধতার নিরসনে নগরবাসীর সহযোগিতা এবং সরকারের সমন্বীত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম সামসুল আলম (ই).পিএসসি.বিএন ‘আজকের দৈনিক পত্রিকাকে’ বলেন, ঢাকা ওয়াসার পাইপ লাইন বসানোসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ চলমান থাকায় ভারীবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে বৃষ্টির পানি দ্রুত নামাতে ঢাকা উত্তর সিটির কিছু কিছু এলাকায় আগে থেকেই চিহ্নত স্থানগুলোতে বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ছুটে যান। তারা ড্রেনের ঢাকানা খুলে দেন এবং বিশেষ কায়দায় জমাটবাধা পানি সরাতে রাস্তার ফুটপাতের সাথে ড্রেনের নালাগুলোতে পরিস্কার করেন। ওইসব নালাগুলোতে জমে থাকা পলিথিন ও আর্বজনা দ্রুত পরিস্কার করে দাঁড়িয়ে থেকে পানি সরানোর ব্যবস্থা করেন।
প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা উত্তর সিটিতে প্রকৌশল বিভাগের একটা ড্রেন সার্কেল আছে। কিন্তু বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতার জন্য নগরবাসী শুরু বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিভাগকে দোষারোপ করতে থাকেন। তবে নগরীর সবগুলো খাল ও ড্রেন পরিস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আশাবাদী আগামীতে আর এই ধরনের জলাবদ্ধতা হবে না। একই সাথে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। রাস্তায়, ড্রেনে ময়লা আর্বজনা ফেলা বন্ধ করতে হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে প্রকৌশল বিভাগের অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেক দিন থেকেই নগরীতে বড় বড় খাল,ড্রেন ও স্যুায়ারেজ লাইন সচল করার জন্য অনেক হাকডাক এবং পরিস্কার ও সংস্কারের গল্প নগরবাসীকে শোনানো হচ্ছে। গণমাধ্যমেও ঢাকা দুই সিটির ওইসব প্রকল্পের সংবাদ প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত পানিতে তলিয়েছে। ভাদ্র-আশ্বিন মাসের বৃষ্টিতেও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ডুবছে। বৃষ্টির পানির সাথে ময়লা পানি মিশে থৈতৈ করছে। অথচ এ খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে সংস্থা দুটি।
নগরবাসীর অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হয়। কিন্তু এবার আশ্বিন মাসের বৃষ্টিতেও সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে। বৃষ্টিতেও কুর্মিটোলায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো জায়গাও তলিয়ে যাচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। নগর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না।
আজ বৃহস্পতিবার বৃষ্টিতে ডিএনসিসি এলাকার অর্ধশতাধিক সড়ক-গলিতে বৃষ্টির পানি জমে। এর মধ্যে ফার্মগেট, নাখালপাড়া, মিরপুর-১ এর দারুস সালাম রোড, মিরপুর-১০ থেকে ১৪ নম্বর, বেগম রোকেয়া সরণির কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন, মিরপুরের প্যারিস রোড, কালশী, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর, আশকোনা, আগারগাঁও, শাহজালাল বিমানবন্দর সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে। এসব স্থানে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত পানি জমে ছিল।
কালশী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে মাস্টার ড্রেন লাইন নির্মাণ কাজ চলমান। নাখালপাড়া ও তৎসংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে পাইপলাইন নির্মাণসহ রাস্তার উন্নয়ন কাজও চলমান। মিরপুর-১ দারুস সালাম রোডের জলাবদ্ধতা কমাতে রাস্তা ও নর্দমার কাজ চলছে। বেগম রোকেয়া সরণি, কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনে পাইপ, নর্দমা নির্মাণকাজ চলমান। একইভাবে প্যারিস রোড, উত্তরা সেক্টর-৪, বিমানবন্দর রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় নালা নির্মাণের কাজ চলছে।
ডিএসসিসি:
প্রতি বছর ঘুরেফিরে নিউমার্কেট, আজিমপুর, পলাশী, ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, বংশালের নাজিরাবাজার, কাজী আলাউদ্দিন রোড, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টনের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। এসব এলাকায় গত ২২ সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিতেও হাঁটুপানি জমেছিল। এর মধ্যে গ্রিন রোড, নিউমার্কেট ও আজিমপুরের অবস্থা ছিল সবচেয়ে নাজুক। এসব এলাকা থেকে পানি নামতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লেগেছে।
এরআগে আজিমপুর ও নিউমার্কেট এলাকার বৃষ্টির পানি বুড়িগঙ্গায় নিষ্কাশনে তিনটি ড্রেন ছিল। এর মধ্যে ঢাকা কলেজের সামনে নায়েম রোড হয়ে নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে দিয়ে এবং আজিমপুরের আইয়ুব কলোনি থেকে তিনটি ড্রেন বিজিবি সদরদপ্তরের ভেতর দিয়ে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে মিলিত হতো।
২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের পর নায়েম রোড ও আইয়ুব কলোনির ৩০ ইঞ্চির বড় দুটি ড্রেন স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ৩ নম্বর রোডের গেটের ভেতর দিয়ে একটি ড্রেনে পানি নিষ্কাশন হলেও নিউমার্কেটের প্লাস্টিক, কাপড়সহ নানান আবর্জনায় ড্রেনটির ওই স্থান ভরাট হয়ে থাকে। ড্রেনের এই অংশে ম্যানহোলগুলো দূরে থাকায় পরিষ্কার করতেও বেগ পেতে হয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের।
আ. দৈ./কাশেম