দেশের বহুল আলোচিত দুর্নীতিগ্রস্ত ও বির্তকিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘নাসা গ্রুপের’ মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার,তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের নামে বিপুল পরিমান স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ প্রতারণা, ব্যাংকের শত শত কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি এবং নাসা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা- কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ না করারও অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে করা একাধিক মামলার আসামি নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার,তার পরিবার এবং তার সহযোগিরা। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের নিরীহ শ্রমিক- কর্মচারীদের বেতন ভাতা বকেয়া রয়েছে অনেক। অবশেষে সরকারের উদ্যোগে ‘নাসা গ্রুপের’ মালিকের সম্পদ বিক্রি করে শ্রমিক- কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
অবশেষে দুদকের মামলার পর ‘নাসা গ্রুপে’র কর্মকর্তা- কর্মচারী ও শ্রমিকদের অনেক দিনের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ওই গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারের সম্পদ বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে ‘নাসা গ্রুপের’ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের কাছ থেকে সম্পত্তি বিক্রির জন্য খসড়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে সম্পদ বিক্রির উদ্যোগের সহযোগতা করছেন ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তপক্ষ। এই উদ্যোগ সফল হলে শ্রমিক ও কর্মচারীরা চলতি সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ভাতাদি পরিশোধ করা সহজতর হবে।
আজ শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল মালেক স্বাক্ষরিত চিঠিতে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এরআগে গত ১৬ সেপ্টেম্বও মন্ত্রণালয়ে অনিুষ্ঠিত এক সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানগণ, বিজিএমইএ-এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামি ব্যাংকের প্রতিনিধিরা।
ওই সভায় নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করার জন্য বিভিন্ন সম্পত্তি বিক্রি সংক্রান্ত খসড়া পাওয়ার অব এটর্নি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। সম্পত্তি বিক্রির জন্য খসড়া পাওয়ার অব এটর্নি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গুলশান ৭ নং রোডের প্লট-৬, আশুলিয়ার তৈয়বপুর মৌজায় ৫ বিঘা জমি ও ৭ তলা ভবন (মোট আয়তন ২ লক্ষ ৬ বর্গফুট) , নারায়ণগঞ্জের চর চেঙ্গাকান্দি মৌজায় ১০ বিঘা জমি, প্রায় ৮৬ কোটি টাকার বিভিন্ন শেয়ার এবং রাজউকের প্লট।
নাসা গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উপর্যুক্ত সম্পত্তি বিক্রির জন্য খসড়া পাওয়ার অব এটর্নি স্বাক্ষরিত হওয়ায় খুব কম সময়ের মধ্যে অন্যান্য প্রক্রিয়াদি সম্পন্ন করে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হবে ।
সূত্র মতে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ৭৮১ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদের অভিযোগে নাসা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এর আগে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান, তার স্ত্রী নাসরীন ইসলাম, মেয়ে আনিকা ইসলাম, ছেলে ওয়ালিদ ইবনে ইসলাম ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ ৫২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
এরপর গত ২০ আগস্ট এক্সিম ব্যাংকের ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে আরো একটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। মামলায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক মো. আল-আমিন বাদী হয়ে ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১–এ এজাহার দায়ের করেন। দুদক জানায়, ‘ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নেওয়া এই বিপুল ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী হয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাঁর পরিবার।
নাসা গ্রুপের মালিক ও পরিবারের সম্পদ : দুর্নীতিগ্রস্ত ও বির্তকিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের নামে বিপুল পরিমান স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদের তালিকায় রয়েছে অনেক সম্পদ। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৩৫০ বিঘা জমি, দুবাইতে রিসোর্ট ও খেজুর বাগান, রাজধানী ঢাকায় ২২ টি প্লটের তথ্য।
এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রে দেখা যায়:
১. গুলশান-১ এর ১২ তলা বিশিষ্ট ২ টি বিল্ডিং (ব্যাংক বিল্ডিং) রয়েছে। ২. ৩০০ ফিট এলাকায় ২ বিঘা জমি রয়েছে যা ল্যান্ডস্কেপিং করা। ৩. জলসিঁড়ির, সেক্টর-১৭’তে একটি কাঁচা মার্কেট রয়েছে। ৪. মেয়ে আনিকার নামে একাধিক প্লট ও পরিবারের সকলের অনেক সম্পদ রয়েছে। ৫. মেঘনাঘাটে একটি ওয়ার হাউজ এবং পেট্রোল পাম্প আছে। ৬. ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০০ বিঘা জমি রয়েছে।
৭. গুলশানে শান্ত মারিয়ম এর পাশে বাউন্ডারি করা আনুমানিক ১০ বিঘা জমি আছে। ৮. দুবাইতে খেজুর বাগান এবং দুবাই রিসোর্ট রয়েছে। ৯. চাঁদপুরে বিশাল একটি মার্কেট রয়েছে।১০. নিকেতনে ১০ বিঘা জমি আছে। ১১. হাতিরঝিলের প্রজেক্টে বড় ২টি খেজুরের ডিপো রয়েছে যাতে ১০-১২ কোটি টাকার খেজুর আছে।
১২. মহাখালী ডিওএইচএস এর মসজিদের পাশে ১০ কাঠা জমির উপর বাসা রয়েছে। ১৩. চব্বিশ (২৪) কোটি টাকা মূল্যের চৎড়ারফবহঃ ঋঁহফ (ঊীরস ইধহশ) রয়েছে। ১৪. গুলশান-১ এ দখলকৃত বাসা আছে যেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৫. গুলশানে ১ বিঘা জমি রয়েছে যা পারটেক্স গ্রুপ এর নিকট থেকে কিনেছে।
১৬. পূর্বাচলে ২০ টি প্লট রয়েছে যা চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের নামে। দুদক ৪/৫ টা ক্রোক করেছে। ১৭. পূর্বাচলে ২.৫ বিঘার উপরে একটি হাসপাতাল আছে (নার্সিং ইন্সটিটিউট এবং হাসপাতাল), ১৮. জলসিড়ি সেক্টর-১৭ এ চেয়ারম্যান এর নামে ২.৫ বিঘা জমির উপর ১০০ কোটি টাকা মূল্যের একটি মার্কেট রয়েছে।
১৯. জলসিড়ি-২ নং সেক্টরে ৮টি প্লট রয়েছে (সাইজ ২০-২৮ কাঠা)। যার মধ্যে ২ টি কর্ণার প্লট রয়েছে। ২০. মসুল (জলসিঁড়ি) নীলা মার্কেটের সামনে পুলিশ হাউজিং এর বিপরীতে ৩০/৪০ বিঘা জমি রয়েছে। ২১. নেভির পাশে ৩০০ ফিট এ ৩০/৪০ বিঘা জমি রয়েছে। যার মধ্যে কিছু গড়ৎঃমধমব আছে এবং ৩০ বিঘা ভরাট রয়েছে যেখানে চিড়িয়াখানা, মসজিদ এবং গেষ্ট হাউজ রয়েছে।
২২. বিজিএমইএ এর উত্তর পাশে দিয়া বাড়ীতে ৩টা প্লট মিলে একটা ৪.৫ বিঘা জমিতে সুইমিং পুল, মসজিদ এবং গেষ্ট হাউজ রয়েছে যার মূল্য ৪০০ কোটি টাকা, ২৩. উত্তরা মাসকট প্লাজার পশ্চিমে ফার্নিচারের দোকান রয়েছে এবং উত্তরা সেক্টর-১৩ (সোনারগাঁ জনপদ) একটি প্লট রয়েছে।
২৪. তেজগাঁও ইন্ডাস্টিয়াল এরিয়া মহাখালী বাস স্ট্যান্ড এর পাশে ৩ বিঘা জমির উপর নাসা হেড অফিস রয়েছে। ২৫. তেজগাঁও আড়ং এর বিপরীতে ৭ বিঘা জমি রয়েছে।২৬. আড়ং এর পাশে লাগোয়া গাজী গ্রুপ থেকে ক্রয় করা ৭ বিঘা জমি গড়ৎঃমধমব দিতে পারে। ২৭. মেঘনা ঘাটে আরও ১০ বিঘার একটি জমি আছে।
আ. দৈ./কাশেম