ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কুমার নদে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে কিশোর-তরুণেরা। গতকাল বুধবার থেকে এসংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাঙ্গা পৌর এলাকার বাইসাখালি, চণ্ডীদাসদী থেকে আতাদী ও পূর্ব সদরদী পর্যন্ত কুমার নদীর প্রায় চার কিলোমিটারে অন্তত ২০টি স্পিডবোট ও অর্ধশত ট্রলারে কিশোর-তরুণেরা মহড়া দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি স্পিডবোট থেকে রামদা, চায়নিজ কুড়ালসহ দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শনের ২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনার পর রাতে ভাঙ্গা থানা-পুলিশ কুমার নদে অভিযান চালায়। তবে পুলিশ অস্ত্র প্রদর্শনকারী কোনো কিশোর বা তরুণকে আটক কিংবা শনাক্ত করতে পারেনি। গতকাল রাত ১০টার দিকে পুলিশের অভিযানের ৩৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়ায়। এতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা একটি ট্রলারে করে অভিযান চালাচ্ছেন। কাছাকাছি একটি নৌকায় উচ্চ শব্দে গান বাজাচ্ছিল কিশোর-তরুণেরা। তারা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে পালিয়ে যায়।
ভাঙ্গা বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার চা বিক্রেতা কুটি শেখ জানান, বিষয়টি দেখার পর থেকে আতঙ্কের মধ্যে আছি। জানি না কখন কী ঘটে যায়। সামনে কী অরাজকতা অপেক্ষা করছে।
ভাঙ্গার ছিলাধরচর এলাকায় নদের পাড়ে বসবাসকারীরা কয়েকজন জানায়, কয়েকটি স্পীডবোটে স্থানীয় কিছু বখাটেরা চাপাতি ও রাম দা নিয়ে নদীতে মহড়া দেয়। তাদের মধ্যে ভাঙ্গা ছিলাধরচর গ্রাম ও পাশের হোগলাডাঙ্গী গ্রামের দুই একজন উঠতি বয়সের যুবক ছিলো। অন্যদের চিনতে পারে নি তারা।
বাজারের কয়েকজন দোকানি জানান, ভাঙ্গা কুমার নদের নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা কয়েকশ' বছরের পুরোনো। এই নৌকাবাইচ আয়োজন করে আসছিল ভাঙ্গা পূজা উদ্যাপন পরিষদ। এতে সহযোগিতা করে ভাঙ্গা বাজার বণিক সমিতি ও ভাঙ্গা পৌরসভা। ২০০৫ সালে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার পর এ আয়োজন বন্ধ করে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে আবার এলাকায় নৌকাবাইচের আয়োজন শুরু হয়। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর মধ্যে আধিপত্যের বিরোধে ২০১৮ সাল থেকে এটি বন্ধ আছে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জগদীশ মালো জানান, প্রতিবছর বিশ্বকর্মা পূজার দিন নৌকাবাইচের আয়োজন বন্ধ থাকলেও স্পিডবোট ও ট্রলারে করে এলাকার কিশোর-তরুণেরা কুমার নদে মহড়া দেয়। গতকাল বুধবারও তারা মহড়া দিয়েছে। তবে কোনো কোনো স্পিডবোট থেকে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়েছে- তা তার জানা নেই।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযানে নামে। তবে জড়িত কাউকে আটক কিংবা শনাক্ত করা যায়নি। এ বিষয়ে অভিযান অব্যাহত আছে।