দুর্নীতির নানা অভিযোগে সদ্য বিদায়ী দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রভাবশালী সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান ও সাবেক কমিশনার জহরুল হকসহ সচিব পদমর্যার সরকারের সাবেক ১২ আমলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠিয়েছে দুদকের অনুসন্ধানী কর্মকর্তা।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী উচ্চপদস্থ ও ক্ষমতাবান এই ১২ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম,ক্ষমতার অপব্যবহার, অনৈতকি সুবিধা নেয়ার জন্য সরকারের সুনিদিষ্ট নীতিমালা ভঙ্গ করে রাজধানীর ধানমন্ডির ৬/১ ঠিকানায় ফ্ল্যাট বরাদ্দ প্রদানের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
প্রাপ্ত অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের পক্ষ থেকে গঠিত দুই সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। দুদকের দায়িত্ব প্রাপ্ত দু্ই কর্ম কর্তজা হলেন; সহকারী পরিচালক আল- আমিন ও উপসহকারী পরিচালক নাহিদ ইমরান। এই দুই কর্মকর্তা দুদকের সাবেক দুই কমিশনারসহ সরকারের প্রভাবশালী ১২ আমলাকে জিজ্ঞাসবাদ করবেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা অনুসন্ধান দলের রুটিন কাজ।
দুদকের নোটিশে আলোচিত ১২ জনের মধ্যে রয়েছেন, দুদকের সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান, দুদকের সাবেক কমিশনার জহরুল হক, সাবেক সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, সাবেক সচিব এম এ কাদেরকে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর আইডিআরএ এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম, সাবেক সচিব আকতারী মমতাজ, সাবেক সচিব মো. সিরাজুল হক খানকে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর এবং সাবেক রেজিষ্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, সাবেক সচিব ও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান সচিব মো. আনিছুর রহমান, সাবেক সিনিয়র সচিব এস এম গোলাম ফারুককে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর তলব করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ‘গৃহায়ন ধানমন্ডি (১ম পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় নীতিমালা ভেঙে উচ্চমূল্যের ফ্ল্যাট বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্প অনুযায়ী, ধানমন্ডির ১৩ নম্বর (নতুন ৬/এ) সড়কের ৬৩ নম্বর প্লটে নির্মিত ১৪ তলা ভবনের ১৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৬০ শতাংশ (১২টি) সরকারি এবং ৪০ শতাংশ (৬টি) বেসরকারি কোটায় বরাদ্দযোগ্য ছিল।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে নেওয়ায় জড়িত’ থাকা সচিব পদমর্যাদার এই ১২ কর্মকর্তাকে পুরস্কারস্বরূপ ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
গত ৫ মে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে। এরপর দুদক অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে। ১২ মে অভিযান চালিয়ে প্রাথমিকভাবে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার কথা জানায় দুদক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধানমন্ডি-৬ এর ৬৩ নম্বর প্লটটি মূলত সরকারি খাস জমি, যার বাজারমূল্য অত্যন্ত বেশি। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে এই জমি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে সেখানে ১৪ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়।
ওই ভবনটিতে দুটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট ও নিচতলাসহ দুই তলা গাড়ি পার্কিং রয়েছে। এর মধ্যে ডুপ্লেক্স দুটি বরাদ্দ পান দুদকের সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান এবং জহরুল হক। বাকি ১০টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয় অন্যান্য সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নামে। জুলাই মাসের শুরুতে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
আ.দৈ. /কাশেম