রাজধানীসহ সারাদেশেই মরণব্যাধি এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত ডেঙ্গুর জীবানুবাহী রোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালে আসছে। জেলা শহরের হাসপাতাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। গত জানয়ারি থেকে এপর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৩৪ হাজার ৪১১ জন। এর মধ্যে ২০ হাজার ৫৯২ জন পুরুষ এবং ১৩ হাজার ৮১৯ জন নারী। এইসাথে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩৮ জন, তাদের মধ্যে ৭৫ জন পুরুষ ও ৬৩ জন নারী।
এডিস মশাসহ সবধরনের মশার উৎপাৎ রাজধানীসহ সারাদেশেই বেড়েছে। মশার যন্ত্রনায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তবে সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় মশক নিধনের কার্যক্রম চলমান থাকলেও এর বাইরেবিশাল এলাকায় গড়ে উঠা বড় বড় ভবন, পাকা ও সেমিপাকা বাড়ি ঘর, মার্কেট এবং দোকান পাটসহ বাড়ির আশপাশে প্রচুর মশা উৎপন্ন হচ্ছে। সেখানে মশা মারার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। তবে ব্যক্তি বিশেষ নিজস্ব উদ্যোগে শুধুমাত্র ঘরের ভেতরের মশা তাড়াতে কযেল ব্যবহার করার খবর পাওয়া যায়। যারফলে সারাদেশেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এবং মৃত্যুও সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩ জনের মৃত্যু এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৫৮০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরো জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে দুজন পুরুষ ও একজন নারী মারা যায়। গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৮৫ জন , ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৮০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫৫ জন, খুলনা বিভাগে ৩২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৭ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন এবং সিলেট বিভাগে একজন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনে মৃত্যু ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪১৫ জনই ঢাকার বাইরের।
ঢাকা উত্তর সিটি:
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ”আজকের দৈনিককে” বলেন, এ বছর গত জুন থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তবে ঢাকার বাইরে থেকে জুলাই,আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু রোগী বেশি এসেছে। ওইসব রোগীর সঠিক ঠিকানা হাসপাতালের রেজিষ্ট্রার রেকর্ড করা হয় না। হাসপাতালে তড়িগড়ি করে রোগীদের নিকটতম আত্মীয় স্বজনদের ঢাকার কোন একটি ঠিকানা লিখেই ভর্তি করা হয়।
ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর ঠিকনায় গিয়ে জানা যায়,উক্ত ঠিকানায় ওই নামের কোন ডেঙ্গু রোগী নেই। এরপরও ডিএনসিসির মশক কর্মীরা ওই ঠিকানায় এবং আশপাশের বাসা বাড়িতে মশা মারার জন্য লার্ভিসাইডিং এবং ফগিং করেন। তিনি বলেন, সঠিক ঠিকানা থাকলে অনেক ভালো হতো। যেমন গাজীপুর, নারায়গঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা রোগীর ওই ঠিকনা থাকলে,সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা মশক নিধনের উদ্যোগ নিতে পারে। কিন্তু ওইসব এলাকার লোকজন জানতেই পারলো না ,তাদের এলাকায় ডেঙ্গু রোগী আছে।
তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটিতে নিয়মিত মশক নিধনের কার্যক্রম চলছে। শুধু তাই নয়, প্রতি সপ্তাহে মশা নিয়ে গবেষণা করা হয়, মশার লার্ভা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। মশা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে অঞ্চল ভিত্তিক লার্ভিসাইডিং এবং ফগিং কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, ২০২২. ২০২৩ ও ২০২৪ সালের মতো ভয়াবহ আকার ধারন করার আগেই বর্তমান সরকার এবং সিটি করপোরেশন আগাম উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এবার ডেঙ্গু নিয়ে অতীতের মতো আতঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই। প্রয়োজন ব্যাপক জন সচেতনার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি:
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন ”আজকের দৈনিককে” বলেন, এ বছর ঢাকার বাইরে থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি রোগী ঢাকায় আসছেন। ঢাকার ভেতরে এডিস মশাসহ সব ধরনের মশা মারার জন্য ডিএসসিসির পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সকালে লার্ভিসাইডিং এবং বিকেলে উড়ন্ত মশা মারার জন্য ফগিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এছাড়া ডিএসসিসির এলাকায় বড় বড় হাসপাতালসহ সব হাসপাতাল থেকেই ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ঢাকার ভেতরে ডেঙ্গু রোগীর ঠেকানা পাবার সাথে সাথে ওই বাসা এবং আশপাশে মশক নির্ধন কর্মীরা ছুটে যান।
তিনি বলেন, মশা মারা ওষুধ, যন্ত্রপাতি এবং মশক কর্মীর কোন সংকট নেই। গত মে ও জুন মাসে নগর ভবন ৪৩ দিন তালাবদ্ধ থাকলেও আঞ্চলিক অফিস থেকে মশা মারার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে গত কোরবানীর বড় ছুটিতে মশা মারার কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
আ. দৈ/কাশেম