দেশ বিদেশে বহুল আলোচিত কোরবানীর রাজধানীতে ছাগল–কাণ্ডে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত থেকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে নিচ্ছিল পুলিশ। গত ১২ আগস্ট দুপুরে খাবারের বিরতিতে একটি রেস্তোরাঁয় নেমেছিলেন তাঁরা। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ সদস্যরা উৎকোচ নিয়ে ওই রেস্তোরাঁর একটি কেবিনে অপর এক ব্যক্তির সঙ্গে মতিউর রহমানের গোপন বৈঠকের সুযোগ করে দেন।
গত ১২ আগস্ট দুপুরে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সৈয়দনগরে নিরালা হাড্ডি নামের এক রেস্তোরাঁয় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক উপপরিদর্শকসহ ১১ পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক আদেশে ১১ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়টি জানানো হয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একজন এসআই, বাকিরা কনস্টেবল। এসআইয়ের নাম আবুল কাশেম। বাকি ১০ জন কনস্টেবল হলেন মনিরুজ্জামান, মো. কবির হোসেন, ইমরান, নির্জন খান, শামীম আলম, মো. রনি হোসেন, শরীফুল ইসলাম, তানভীর রহমান, মো. আবু সাইদ মিয়া ও রবীন্দ্র দাস। তাঁদের সবাইকে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি জানার পরই পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি এই ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। এর ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত ১১ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনসে ক্লোজ করা হয়েছে।’
জেলা পুলিশের আদেশে বলা হয়, ১২ আগস্ট ওই পুলিশ সদস্যরা কিশোরগঞ্জ কারাগার থেকে মতিউর রহমানকে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যান। আদালতে হাজিরা শেষে ফিরতি পথে নরসিংদীর একটি রেস্টুরেন্টে খাবারের জন্য যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, স্কর্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা উৎকোচ নিয়ে হাজতি মতিউর রহমানকে নানা সুযোগ-সুবিধা দেন।
এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ সদস্যরা হাজতি মতিউর রহমানকে আলাদা কক্ষে বসিয়ে আর নিজেরা সাধারণ স্থানে খাবার গ্রহণ করেন। এট স্পষ্টত দায়িত্বে অবহেলা।
সরেজমিনে আজ শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিরালা হাড্ডি নামের ওই রেস্তোরাঁয় গিয়ে কথা হয় রেস্তোরাঁটির মালিক মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়ার সঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও দেখে তিনি নিশ্চিত করেন, ঘটনাটি তাঁর রেস্টুরেন্টেরই। ঘটনার সময় তিনি রেস্টুরেন্টেই অবস্থান করছিলেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার রিতেশ চাকমা বলেন, সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে গত ১১ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ কারাগারে আনা হয়। এর মধ্যে তাঁকে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ ঢাকা আদালতে তিনবার হাজির করা হয়। সর্বশেষ তাঁকে গত ১২ আগস্ট হাজির করতে কিশোরগঞ্জ কারাগার থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছিল এবং একই দিন তাঁকে আবার কিশোরগঞ্জ কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে ২৬ আগস্ট মতিউর রহমানকে কিশোরগঞ্জ থেকে কাশিমপুর-২ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
আ. দৈ. / কাশেম