সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫,
২৭ শ্রাবণ ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
জাতীয়
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর শেষ
ড. ইউনূসের অনেক সাফল্য কিছু ব্যর্থতা রয়েছে; সামনে নির্বাচন বড় চ্যালেঞ্জ
আবুল কাশেম:
Publish: Friday, 8 August, 2025, 8:14 PM  (ভিজিট : 30)

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী সরকারের সীমাহিন দুর্নীতি, জুলুম,হত্যা, ভয়ঙ্কর আয়না ঘরে বছরের পর বছর বন্দি রাখা, গুম, বাকস্বাধীনতা হরণ, মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে কারাগারে আটকে রাখার প্রতিবাদ এবং সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে  সারাদেশে ছাত্র জনতার আন্দোলনে গত বছর ওই সরকারের পতন হয়। ওই আন্দোলনে দমন-পীড়নের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে তা শেষ পর্যন্ত গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।

ছাত্র জনতার আন্দোলন চূড়ান্ত অভ্যুত্থানে রূপ পায় গত বছরের ৫ আগস্ট । ওই দিন সপরিবারে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছর ক্ষমতার পতন ঘটে। এর ৩ দিন দেশ সরকারহীন থাকার পর, ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। আজ আরেকটি ৮ আগস্ট, ‘বদলে যাওয়া’ বাংলাদেশের সেই সরকারের এক বছর পূর্ণ হলো। তবে সামনে জাতীয় নির্বাচন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বতীকালীন সরকারের এক বছরে অনেক সাফল্য ও কিছু ব্যর্থতা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক দলগুলো আলাদা আলাদা করে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। সুশীল সমাজ বা নাগরিক সমাজের বিশ্লেষকরা নিজ নিজ মূল্যায়ন করছেন। কিছু বিষয়ে সবার মত এক,গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি ভেঙে পড়েছিল এবং সরকার তা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। ‘মব জাস্টিস’ নামক ভয়াবহ অরাজকতা দেখা দেয় সারা দেশে, যা এখনো মাঝে মাঝে ঘটছে। এ নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও সরকার জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করায় এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি স্বস্তি প্রকাশ করেছে। তার মানে তারা মনে করছে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে গেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী যদিও এ বিষয়ে এখনো স্বস্তিতে নেই। নির্বাচন ইস্যুতে ‘বড় দল’কেই কেবল গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার- এমন সমালোচনা করছে তারা। তাছাড়া গণহত্যার বিচার ও সংস্কার ইস্যুতে গুরুত্ব না দিয়ে নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও সমালোচনা করছে তারা।

অর্থনীতির বিষয়ে সবার মূল্যায়ন মোটামুটি ইতিবাচক। ঋণের নামে প্রায় দেউলিয়া করে দেওয়া ব্যাংক খাতে মোটামুটি স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে সরকার- এটি সবার প্রশংসা পাচ্ছে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো থাকায় এবং সরকারের কিছু ভালো পদক্ষেপে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ও ডলারের মার্কেট স্থিতিশীল আছে।

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক দল, ছাত্র-শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আন্দোলনের মুখে পড়ে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে এসব পরিস্থিতি দক্ষভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাটও রোধ করা যায়নি। ফলে সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ছিল।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই এক বছরে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার হার আগের মতোই রয়ে গেছে, কিছু ক্ষেত্রে বরং বেড়েছে। একইভাবে হত্যা ও সহিংস অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বিগত ১ বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা কী তা আপনারা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। আসলে সরকারের করার কিছু ছিল না। অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা- সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার খুব একটা সফল হতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি খুবই উদ্বেগজনক।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমাদের মতে দেশে যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের সফলতা-ব্যর্থতা দুইটাই থাকে। সেই হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে মোটামুটিভাবে এখনও পরিচালনা করছে। মেজর কিছু ইস্যুকে তারা ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানুষের নিরাপত্তায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, শহীদ পরিবারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং আহতদের জীবনের দায়িত্ব নেওয়া; সর্বোপরি এই বিষয়গুলোতে সরকার মোটেই মানুষের কাছে সন্তোষজনক জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ আছে মানুষের মধ্যে এবং পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক। জুলাই গণহত্যার বিচারে সরকার কিছুটা এগোলেও কার্যকর কিছু দৃশ্যমান হয়নি বলে উল্লেখ করেন সাকি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে, এই ১ বছরের মধ্যে কিছুটা উতরে আসার চেষ্টা করেছে সরকার। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকারিতা খুবই কম ছিল। বিগত এক বছরে  সেখান থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিগত এক বছরে সরকার রাষ্ট্রীয় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। কিছু জায়গায় নাগরিক সেবার আয়োজন করলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়।

এসব ব্যর্থতার মাঝেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখছেন রাজনৈতিক নেতারা। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বড় একটি সাফল্য হলো—ব্যাংক ও আর্থিক খাতে চলমান দুর্নীতির লাগাম টানা। অর্থপাচার বন্ধ করা এবং ব্যাংকিং সেক্টরে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে সেটিকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়ন বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার মতো বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে।

রাজনীতিবিদরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো—রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিষয়ে ডান-বাম সব রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারা। অনেকগুলো সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কিছু দল আপত্তি জানালেও সরকার ইতোমধ্যে 'জুলাই ঘোষণাপত্র' প্রকাশ করেছে এবং 'জুলাই সনদ' তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে এই দুটির বাস্তবায়ন ও আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও মতভেদ রয়ে গেছে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে, যেটা প্রায় শেষের দিকে। সেখানে মৌলিক কিছু সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। গণহত্যার বিচার কাজ শুরু হয়েছে, শেষ পর্যন্ত কতটুকু যায় এটা দেখার বিষয়।

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিন (৫ আগস্ট) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে নির্বাচন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। নির্বাচনের এ ঘোষণায় বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে।

রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছিল প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন নিয়ে ঘোষণার মধ্যে দিয়ে তা দূর হয়েছে। এখন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি, সবার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং জুলাই গণহত্যার বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান করা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলো।

জামায়াত, এনসিপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের অভিমত, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও কার্যকর নয়। এখন পর্যন্ত সারা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা একতরফা একটি দলের পক্ষে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের সব স্তরে নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ না নিলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কঠিন হয়ে পড়বে।

আ.দৈ./কাশেম
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সরকারি চাকুরিজীবীদের কাজে ফাঁকি দেয়ার সযোগ নেই: দুদক চেয়ারম্যান
জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের অনুমোদন বাতিলের আল্টিমেটাম
সেই আনিসার পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই
হারুন-বিপ্লবসহ পলাতক ৪০ পুলিশের পদক প্রত্যাহার
‘নাটক কম করো পিও’, তিশার উদ্দেশে বললেন শাওন
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আটলা গ্রামের তরুণ যুবকদের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
পানির দাবিতে পল্লবীতে কালশী রাস্তা অবরোধ বিহারী ক্যাম্পবাসীর
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কমিটি, আহ্বায়ক- কিবরিয়া, সদস্য সচিব- ইমরান
অর্থপাচার মামলায় ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস পেলেন জি কে শামীম
আবাসিক হোটেলে প্রেমিকের সঙ্গে রিয়া মনি, ভিডিও ফাঁস করলেন হিরো আলম
জাতীয়- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝