প্রকাশ্যে দিবালোকে অনেক মানুষের সামনে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করেছে অত্রধারী সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় নিহত সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম বাদী হয়ে বাসন থানায় থানায় মামলা করেছেন। এরপর পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছে। আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে ।
তিনি বলেন, ওই ঘটনার একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও এরই মধ্যে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়,এক যুবক প্রকাশ্যে এক তরুণকে মারধর করছেন। তখন ৬-৭ জন যুবক চাপাতি, রামদা ও ছুরি নিয়ে ওই যুবকের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। ওই যুবক দৌড়ে পালিয়ে গেলে অস্ত্রধারীরা তাকে ধাওয়া করে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ উত্তর) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তের পর শুক্রবার সকালে জানান চাঁদাবাজি নয়, বাদশা নামে এক যুবকের ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সাংবাদিক তুহিন এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন। সেই সময় অস্ত্রধারীরা তাকেও ধাওয়া দেয়। তিনি প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে আশ্রয় নেন ঈদগাহ মার্কেট এলাকার একটি চায়ের দোকানে। দুর্বৃত্তরা সেখানে ঢুকেই তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহীন খান জানান, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই মো. সেলিম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। পরে হত্যার সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অভিযোগ ওঠে, রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজরা তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এক চা দোকানি বলেন, ওই সাংবাদিক দোকানে আসেন। তারপর পাঁচ-ছয়জন লোক রামদা, চাপাতি ও ছুরি নিয়ে এসে তাকে কোপাতে থাকে। তাদের থামার জন্য অনুরোধ করলে তারা গালি দিয়ে বলে তোর ঘাড় ফেলে দেব। পরে আমি ভয় পেয়ে লুকিয়ে পড়ি।
নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহের কাজ করতেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম-উত্তর) মো. রবিউল হাসান বলেন, আমাদের ধারণা, অন্য একজনকে মারধরের ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিক তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে। দোষীদের আটক করা গেলে ঘটনার পুরো চিত্র পরিষ্কার হবে।
আ. দৈ./কাশেম