শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫,
১৭ শ্রাবণ ১৪৩২
ই-পেপার

শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫
ব্যাংক-বীমা
অপরিবর্তিত থাকছে রেপো সুদহার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
Publish: Thursday, 31 July, 2025, 7:32 PM  (ভিজিট : 9)

মূল্যস্ফীতির হার কমে এসে গত জুনে ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। একই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিও কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪০ শতাংশে। এমন প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা সুদহার কমিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে আহ্বান জানান। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আপাতত প্রধান নীতি সুদহার (রেপো) অপরিবর্তিত অর্থাৎ ১০ শতাংশে বহাল রেখেছে। চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর, নীতিনির্ধারক, পরামর্শক, প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের পরিচালক এবং মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্ররা উপস্থিত ছিলেন।

গভর্নর বলেন, যতক্ষণ না মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশের নিচে স্থায়ীভাবে নেমে আসে, ততদিন নীতি রেপো হার ১০ শতাংশ নির্ধারণ থাকবে। এছাড়া স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির হার ৮ শতাংশ বজায় রাখা হবে।

চলতি মুদ্রানীতিতেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আগামী বছরের জুন নাগাদ গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর রেপো সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করে। রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়।

নতুন মুদ্রানীতিতে স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির হারও আগের মতো ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে, ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অর্থ রাখলে যে সুদ পায়- সেই স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির হার গত ১৫ জুলাই ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৮ শতাংশে নামানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আপাতত রেপো সুদহার ১০ শতাংশ থাকবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যাংকের সুদহার কমানো হতে পারে। তবে এর জন্য মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে থাকা প্রয়োজন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে আমরা কিছুটা সফল হয়েছি। এখন সেটা সাড়ে ৮ শতাংশের ঘরে। আশা করছি, কয়েক শতাংশ কমে মূল্যস্ফীতি ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। মূল্যস্ফীতি ৩ শতাংশে না নামানো পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হবো না।
গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দুটি দিক থেকে নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হয়— এক. সরবরাহের দিক থেকে এবং দুই. চাহিদার দিক থেকে। আমরা প্রথমে চাহিদা কমানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছি। তাই সুদহার বাড়াতে হয়েছে। ফলে ব্যাংক ঋণ ও তারল্য সংকুচিত হয়। একই সঙ্গে সরকারও বাজেট সংকোচন করেছে।

সরবরাহের দিক থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত বছর ডলারের সংকট থাকলেও আমরা বিদ্যুৎ, সার ও এলএনজির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে আমদানিতে বিঘ্ন ঘটতে দিইনি। ডলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রথমে ১২২ টাকা রেট নির্ধারণ করি, পরে বাজারের ওপর ছেড়ে দিই। অনেকে ভেবেছিল তখন রেট ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। সুদহার কমানোর বিষয়ে গভর্নর বলেন, যখন মূল্যস্ফীতি পলিসি রেটের (নীতি সুদহার) ৩ শতাংশ নিচে নামবে, তখনই আমরা সুদহার কমাতে পারবো। বর্তমানে রেপো রেট ১০ শতাংশ, সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামলেই তা পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকবে।


তিনি আরও বলেন, সুদহারের কিছুটা নিম্নমুখী এরই মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার ১২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া ওভারনাইট রেটও সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে, যাতে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা রেখে সহজে মুনাফা করতে না পারে। মুনাফা করতে হলে বিনিয়োগ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সুসংহত কৌশলে কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন গভর্নর।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম। এর আগের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। অপরদিকে, সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ।

গত জানুয়ারিতে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, তবে জুন শেষে অর্জিত হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর আগের ডিসেম্বরেও প্রায় একই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। সরকারি খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরে এ হার ছিল ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, কিন্তু বাস্তবে অর্জন হয়েছে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।

মুদ্রা সরবরাহের দিক থেকেও সামান্য বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত মুদ্রা সরবরাহের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরা হয়েছে, যা আগের ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে সামান্য বেশি। তবে মে মাস পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, বাজারে বাস্তব মুদ্রা সরবরাহ ছিল ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী, ডলার কেনার মাধ্যমে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে। সেইসঙ্গে কিছু দুর্বল ব্যাংককে বিশেষ সহায়তা হিসেবে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সামগ্রিক অর্থ সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে।




আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৪১৪তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
মিডল্যান্ড ব্যাংক ও টালিখাতার উদ্যোগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর জন্যে ডিজিটাল আর্থিক সেবায় নতুন সম্ভাবনা
মেঘনা ব্যাংকের ১৯৬তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৯৭তম সভা অনুষ্ঠিত
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক সিকিউরিটিজের ৪৯তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

কমার্স ব্যাংকের এমডি মোশারফ হোসেনকে অপসারণ
দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত ওমর ফারুক এমডি হতে মরিয়া
কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থী সাজিদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটনের পক্ষে ইবি উপাচার্য
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে সংসদ: সালাহউদ্দিন
জুলাই শুধু স্বৈরাচার মুক্তির নয়, পুনর্জন্মেরও মাস: প্রধান উপদেষ্টা
ব্যাংক-বীমা- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝