গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় ‘নিহত’ বলে প্রচারিত একজনের পরিচয় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি। নিহত বলে যে ‘রমজান কাজী’র নাম ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে, তিনি আসলে জীবিত এবং সম্পূর্ণ সুস্থ।
তার প্রকৃত নাম জুলকার নাইম (ডাকনাম হৃদয়), বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার ধোপাকান্দি গ্রামে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে কামারখন্দ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের জীবিত থাকার ঘোষণা দেন জুলকার নাইম। এ সময় তিনি বলেন, “আমি জীবিত ও সুস্থ। অথচ আমার ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে ‘রমজান কাজী’ নামে আমাকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে গোপালগঞ্জের সহিংসতায় নিহত দেখানো হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও মানহানিকর।”
তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সময়ের একটি ভিডিও ও ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এ ধরনের অপপ্রচার আমার মানসিক ও পারিবারিকভাবে ক্ষতি করছে। আমি দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।”
জুলকার নাইমের বাবা মো. আলী আক্কাস সরকার বলেন, “আমার ছেলে বাড়িতেই আছে এবং সুস্থ। অথচ গোপালগঞ্জের ঘটনার সঙ্গে তাকে মিথ্যাভাবে জড়ানো হয়েছে, যা আমাদের পরিবারের জন্য দুঃখজনক ও লজ্জাজনক।”
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন এবং ছাত্রলীগ কর্মীদের এই অপপ্রচারের নিন্দা জানান।
গতকাল বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয় বলে জানা যায়। পরে বিভিন্ন ছাত্রলীগ কর্মীর ফেসবুক আইডি থেকে নিহতদের তালিকায় কোটালীপাড়ার রমজান কাজী, গোপালগঞ্জ শহরের দীপ্ত সাহা, টুঙ্গিপাড়ার সোহেল রানা এবং সদর উপজেলার ইমন তালুকদারের নাম প্রচার করা হয়।
তবে এই তালিকায় থাকা 'রমজান কাজী' নামে যে ছবি প্রচারিত হয়েছে, সেটি ছিল মূলত সিরাজগঞ্জের জুলকার নাইম-এর। যার ফলে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য।
জুলকার নাইম ও তার পরিবার এখন সেই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার, এবং তারা প্রকৃত তথ্য যাচাই করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক মহল ও সচেতন মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য যাচাই ছাড়া গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।