সময়ে সময়ে ব্যাংকটি বিভিন্ন সংকটে পড়লেও তাঁদের পেশাদারত্বে ভর করে মোটামুটি সফলতার সঙ্গেই এগিয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমান এমডি মো. ওয়াহিদুল ইসলামের যোগ্যতা নিয়ে ব্যাংকটির শীর্ষ ওই পদকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
চামড়া বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করা প্রকৌশলী কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম। খোলস পাল্টিয়ে এমডি হয়েছেন রূপালী ব্যাংকের। আওয়ামী লীগের আমলে সম্পৃক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সঙ্গে। বৈরী হাওয়ায় নৌকার পাল ছেড়ে দিয়ে হয়েছেন সংস্কারপন্থী। অস্বীকার করতে চান রাজনৈতিক আদর্শও। এ নিয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। কিন্তু পদ বাগাতে নাছোড়বান্দা কাজী ওয়াহিদুল ইসলাম।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ রূপালী ব্যাংক শাখার সিনিয়র সহসভাপতি পদ ছিলেন ওয়াহিদুল। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারির কমিটিতে। তৎকাল থেকেই কমিটির সভাপতি শচীন্দ্র নাথ সমাদ্দার। এখন আছেন বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকে (বিডিবিএল)। কমিটি গঠনের সময় তার পোস্টিং ছিল খুলনায়, রূপালীর ডিজিএম হিসেবে। সভাপতির অনুপস্থিতিতে গুরুদায়িত্ব পালনের জন্যই হয়তো সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ বাগিয়েছিলেন এই কাজী ওয়াহিদ। আওয়ামী লীগের আমলেই জুলাই আন্দোলন ও ‘গণহত্যা’ চলাকালেও ওই পদের পরিচয় দিতে বিব্রতবোধ করেননি তিনি। কিন্তু ৫ আগষ্ট তার নেত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পর থেকে রূপ বদলাচ্ছেন ওয়াহিদুল। এড়াছা ৫ আগস্টের হত্যা মামলায় রমনা থানায় রূপালী ব্যাংকের এমডি কাজী ওয়াহিদুল ইসলাম নামও রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। ৫ আগস্টের আগে ছাত্র দমনে লীগের হয়ে নিজেই অর্থ ব্যয় করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রাষ্ট্রায়াত্ব ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডির চুক্তি বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। পরে গত আগস্টে মাসে এক সাথে ১০ ব্যাংকের এমডি নিয়োগেও ওয়াহিদুল ইসলাম ছিলেন না। এমডি হওয়ার আগে ব্যাপক তদবির করেন তিনি। দৌড়ঝাঁপ করেন বসেন এমডির চেয়ারে। কিন্তু বসার পর থেকে ব্যাংকের আর্থিক সূচকে একের পর এক অবনতি হচ্ছে। তার কারণে রূপালী ব্যাংক এখন ডুবতে বসেছে।
রূপালী ব্যাংকের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমান এমডি যোগদান করার পরে ব্যাংকের কোনো কাজ হচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ ও আমদানি এবং রফতানি থেকে শুরু করে কোনো সূচকেই উন্নতি করতে পারছে না। দিন দিন ব্যাংকের আমানত কমছে। এছাড়া প্রভিশন ঘাটতি বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংক লসে চলে যাবে। রূপালী ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু কোনো প্রকার উদ্যোগ নিচ্ছেন না এমডি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, রূপালী ব্যাংকের এমডি ওয়াহিদুল ইসলাম বর্তমান এমডিদের মধ্যে একজন দুর্বল ব্যক্তি। তিনি একজন ব্যাংকের এমডি হওয়ার যোগ্যতা নেই। তার কারণে ব্যাংকের পর্ষদের ভিতরে এক ধরণের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কারণ তিনি ব্যাংকিং তেমন একটা বুঝে না। গত ১০ মাসে রূপালি ব্যাংকে কোনো অগ্রগতি নেই। এভাবে অযোগ্য লোক দিয়ে ব্যাংক চলতে পারে না। তাই তাকে সরিয়ে দেয়াই ভালো।
জানা গেছে, রূপালী ব্যাংকের সুপারনিউমারারি পদোন্নতি ঘিরে হয়েছে অর্থনৈতিক লেনদেন। এতে সরাসরি লেনদেন করেছেন এমডি ওয়াহিদুল ইসলাম নিজেই। এতে মেধা ও সুপারপ্রাপ্তদের মধ্যে তুমুল অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা দিয়ে ছিলো। তার অর্থ নেওয়াকে কোনোভাইে মেনে নিতে পারছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তাকে নিয়ে ব্যাংকের মধ্যে বড় ধরণের ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, তার মতো লোক রূপালী ব্যাংকে থাকলে, রূপালী ব্যাংক আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
এব্যাপারে রূপালী ব্যাংকের এমডি ওয়াহিদুল ইসলামের বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিক বার মোবাইল করলেও তিনি মোবাইল ধরেনি।