একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সকল আসামির খালাস বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দিন ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অন্যদিকে আসামিপক্ষের পক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা, তাদের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুলসহ আরও অনেকে।
গত ২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আলোচিত এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে সব আসামিকে খালাস দেন। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ে মন্তব্য করেন, “একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার ছিল অবৈধ, যা আইনের চোখে টেকসই নয়।”
আদালত আরও বলেন, মামলার চার্জশিট ছিল আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এই রায়ের বিরুদ্ধেই আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ, যার শুনানি হতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় ঘোষণা করে। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা: লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, এবং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নেতা মাওলানা তাজউদ্দীনসহ আরও অনেকে।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা: তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ বেশিরভাগই বর্তমানে পলাতক।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের একটি জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন সেই সমাবেশের প্রধান বক্তা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন এবং শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও এখনো তার শ্রবণশক্তিতে স্থায়ী ক্ষতি রয়ে গেছে। অনেক আহত ব্যক্তি এখনো গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরে নিয়ে যন্ত্রণা সহ্য করছেন, কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।