ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারাদেশে একযোগে ছাত্র-জনতার অসহযোগ আন্দোলন অবশেষে অভ্যুত্থানে রুপ নেয়। একই সাথে গতবছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সপরিবারে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। এরপর গত বছর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
আর বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে গত বুধবার (২৫ জুন) পরিপত্র জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর থেকেই এ নিয়ে চলছে পক্ষে বিপক্ষে নানা আলোচনা। এবার এ বিষয়ে নিজের অবস্থান জানালেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
আজ শুক্রবার (২৭ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণা নিয়ে নিজের অবস্থান জানান আমীরে জামায়াত। শফিকুর রহমান পোস্টে লেখেন, ৮ আগস্ট নয় ৫ আগস্টকেই নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণা করা উচিত। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের পতনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা তারুণদের সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি।
গত বছর ১৮ জুলাইকে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের সরাসরি গুলিতে মারা যান। পুলিশের সামনে তার দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে পুলিশের গুলি খেয়ে শহীদ হওয়ার ছবি সারা দুনিয়ায় ভাইরাল। এ ঘটনায় আন্দোলন আরও বেগবান হয়।ফলে ১৮ জুলাইকে সরকারি ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতিবছর ১৮ জুলাই, ৫ আগস্ট ও ৮ আগস্ট সরকারিভাবে পালিত হবে। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের দল এনসিপিও ৫ আগস্টকে নতুন বাংলাদেশ হিসেবে চায়।
কুলাউড়ায় নিষ্পাপ মেয়ের খুনিকে বাঁচানোর চেষ্টা জনগণ সহ্য করবে না: জামায়াত:
এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমার নিজ উপজেলায় নাফিজা জান্নাত আনজুম হত্যার মর্মান্তিক সংবাদ ঢাকা থাকাবস্থায়ই শুনতে পেরেছি। এ খবর শুনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি।
আজ শুুক্রবার দুটি কারণে মেয়েটির বাড়িতে উপস্থিত হয়েছি। প্রথমতো মেয়েটির কবর জিয়ারত করা এবং তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করা। আমি মেয়েটির বাবার সাথে আলাপ করেছি, উনার কথা শুনে আমার বিবেকে আঘাত লেগেছে, এ নির্মম হত্যাকান্ড প্রমাণ করে আমরা কোন সমাজে বাস করছি! এই নিস্পাপ মেয়েটিকে হত্যা করে তার পরিবারের উপর যে জুলুম করা হলো, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
ওই সময়, বাড়ির আঙ্গিনায় এলাকার শত শত মানুষের উপস্থিতিতে উচ্চকণ্ঠে জনতা শ্লোগান দেয় ‘আনজুম হত্যাকারীর ফাঁসি চাই, দিতে হবে’ প্রতিবাদী জনতাকে সান্ত্বনা দিয়ে এ সময় তিনি বলেন, আমরা এ নির্মম হত্যার বিচার চাই। আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছি এ মামলাটিকে প্রভাবিত করার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল জালিমের পক্ষ নিয়েছে। যদি তাই হয় আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের নিয়ে আমরা জালেমের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আমার কথা হয়েছে, আমি স্পষ্টভাবে তাদের বলেছি এই খুনিকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে এদিক ওদিক করলে তা সহ্য করা হবেনা। তিনি প্রশাসনের উদ্দেশে আরও বলেন, পুলিশের কলম যেন ন্যায়ের পক্ষে থাকে, মামলার আইও যাকে নিয়োগ করবে সেই তদন্তকারী কর্মকর্তা যেন কোনো নয়ছয় না করেন। এ মজলুম পরিবারকে সহযোগিতা করলে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ সাধিত হবে।
আমীরে জামায়াতের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শাহেদ আলী, নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মোঃ ইয়ামীর আলী, ছাত্রশিবির জেলা সভাপতি নিজাম উদ্দিন কুলাউড়া উপজেলা সেক্রেটারি বেলাল আহমদ চৌধুরী, সহকারী সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম খান ও আলাউদ্দিন, ছাত্রশিবির উপজেলা সভাপতি আতিকুর রহমান তারেক ও প্রমুখ। বাড়ির উঠান ভর্তি প্রতিবাদী জনতার উদ্দেশে আরও বক্তব্য রাখেন গাংগুল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউসুফ আলী, সাবেক উপজেলা আমির আব্দুল হামিদ খান, উপজেলা শূরা সদস্য রাজানুর রহিম ইফতেখার, মৌলভীবাজার জেলা কর্মপরিষদ সদস্য আজিজ আহমদ কিবরিয়া, ব্রাহ্মণ বাজার ইউনিয়ন সভাপতি হাসান আলী।
মর্মাহত পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে যাবার সময় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার অনেক সাংবাদিক ছিলেন। আমীরে জামায়াতকে একজম সাংবাদিক বর্তমান রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, এই মেয়ে যদি আমার মেয়ে হতো তাহলে আমার কেমন লাগতো। প্লিজ ভাই আজকে আপনারা সেক্রিফাইস করেন। আমি আজকে কোনো রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিনা বলে দুঃখিত।
আমীরে জামায়াত আনজুমের বাড়ির পার্শে দাউদ পুর জামে মসজিদের পশ্চিমে অবস্থিত সবুজে ঘেরা কবরস্থানে গিয়ে উপস্থিত সকলে নিয়ে কবর জিয়ারত করেন ও মোনাজাত পরিচালনা করেন।মরহুমার ঘরে গিয়ে বাবা খালিক মিয়া, ছোট ভাই ও শিশু বোনটিকে সান্তনা দেন। পর্দার আড়াল থেকে আঞ্জুমের মা চিৎকার দিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে কলিজার টুকরা সম্পদ মেয়ের হত্যাকারীর বিচার দাবি করেন ও মেয়ের জন্য দোয়া করার আহ্বান জানান। আমীরে জামায়াত পরিবারের সকলকে নিয়ে দোওয়া পরিচালনা করেন।
আ. দৈ./কাশেম