জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় সংলাপে অংশ নেয়নি জামায়াতে ইসলামী। এর কারণ হিসেবে দলটি জানিয়েছে, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ সম্মেলন ঘিরে তাদের আপত্তি রয়েছে। এ কারণেই গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেয়নি তারা।
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তৃতীয় সংলাপে বিরতিতে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠককে আমরা ওয়েলকাম জানিয়েছি। ওখানে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে তিনি যে কথা বলেছেন, সেটাতেও আমাদের তেমন কোনো আপত্তি নেই। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে সময়সীমা রেখে আমরা প্রস্তাব করেছিলাম। সুতরাং ডিসেম্বর হলেও আমাদের দাবির ভেতরে হতো। এখন শর্তস্বাপেক্ষে যে ফেব্রুয়ারির কথা বলা হয়েছে, সেখানেও আমাদের প্রস্তাবের ভেতরেই আছে। এপ্রিলে যদি হতো, যেটা উনি (প্রধান উপদেষ্টা) সেটাও আমাদের প্রস্তাবের ভেতরেই ছিল।’
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা যে জায়গাতে প্রশ্ন তুলেছি যে উনি জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণ দিয়েই টেলিভিশনে একটা তারিখ ঘোষণা করেছেন। এখানে যদি কোনো পরিবর্তন হয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে, এইটা হইতেই পারে। বিএনপি একটি বড় দল, তাদেরও দাবি ছিল এবং আলোচনা করে উনি যদি কনভিন্সড হন চেঞ্জ হইতেই পারে। এটা নিয়ে আমাদের কোনো কথা নাই। কিন্তু এটা ভালো হইত, যেহেতু উনি একটি টেলিভিশনে কমিটমেন্ট করেছেন, বাংলাদেশে এসে আবার কথা-বার্তা বলে এটাকে উনি রিভাইস করতে পারতেন, কিন্তু সেটা উনি করেন নাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম, উনি একটি দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে রিপিট হয়েছে কি না, আমাদের জানান নাই। বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে প্রধান বিরোধীদল বা পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সঙ্গে মিটিং হয়। এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্রে ১০০টিরও বেশি দল আমাদের দেশে আছে। তাহলে তো এমন কালচার তৈরি হবে, উনি যার সঙ্গে কথা বলবেন একটা জয়েন্ট স্টেটমেন্ট দিতে হবে। আমরা মনে করি এটা নজিরবিহীনস্বরুপ এবং এটা প্রোপার ছিল না।’
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘এতে দেশের বাকি সব দলই কিছুটা বিব্রত। আমরাও তেমন ফিল করি। শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামী নয়, সকল দলের কিছুটা বিব্রত হয়েছে। জয়েন্ট স্টেটমেন্ট এবং জয়েন্ট প্রেস ব্রিফিং- এখানেই আমাদের আপত্তি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। সেই কারণে আমাদের ধারণা হয়েছে যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন এবং এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে যে সংস্কার কমিশন আছে সেখানেও তারা খুব বেশি অগ্রসর হতে পারবে না। সে কারণে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে আমরা গতকাল আসিননি। ‘
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং কালদুপুরে প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতের আমিরের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা মনে করি, এরপরে প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য অনুধাবনের চেষ্টা করেছেন। পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামী বুধবারের আলোচনায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।’