দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান (দুদক) ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রবল সমর্থন থাকা সত্ত্বেও দেশটির দুর্নীতি নিবারণের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছেন। কারণ টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনিদিষ্ট অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যায়নি। যারফলে তার পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিককে দালিলিকভাবে দায়েরকৃত মামলা আদালতে উপস্থিত হয়ে মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তার আইনজীবী।
আজ রোববার (০৬ এপ্রিল)দুপুরে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ঈদ পরবর্তী সংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এসব কথা বলেন। এ সময় কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ,মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ পরিচালক মো. আকতারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, 'সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ছোট সংবাদ কণিকার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মিস টিউলিপ সিদ্দিকের বিলেতি আইনজীবীর পাঠানো পত্রের জবাব আমরা প্রদান করিনি; স্কাই নিউজের সূত্র উল্লেখ করে অভিযুক্ত বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তার সঙ্গেও যোগাযোগ করেনি।'
তিনি বলেন, 'অনুগ্রহ করে লক্ষ্য করুন দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারেননি বলেই ব্রিটেনের দুর্নীতি নিবারণের মন্ত্রী মিস টিউলিপ সিদ্দিক সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রবল সমর্থন সত্ত্বেও পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। দুদক তার আইনজীবীকে এবং আইনজীবীর মাধ্যমে মিস টিউলিপ সিদ্দিককে জানিয়ে দিয়েছে, সম্পূর্ণভাবে দালিলিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই আদালতে দুর্নীতির চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আদালতে হাজির হয়ে তারা যেন অভিযোগের মোকাবিলা করেন। এটি কম্পাউন্ডে বল কোনো মামলা নয় (গুরুতর আইনি বিষয় যা সহজেই আপসযোগ্য নয়), চিঠি লেখালেখি করে এ মামলার পরিণতি নির্ধারিত হবে না। আদালতেই তা নির্ধারিত হবে। আদালতে তার অনুপস্থিতি অপরাধমূলক পলায়ন বলে বিবেচিত হবে। কেবল টিউলিপ সিদ্দিক নন দুর্নীতির প্রশ্নে সাবেক পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে যে কোনো সাধারণ নাগরিকের বেলায়ও দুর্নীতি দমন কমিশন একই প্রমিত প্রক্রিয়া অবলম্বন করে থাকে।
এ সময় তিনি একটি ইংরেজি বিবৃতি গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ঈদের শুভকামনা এবং অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও দুদকের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান মোমেন বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুইসেলরোয়ার হচ্ছে সংবাদ মাধ্যম। সেই বংশীবাদন মোহন বাঁশির নয়, আপনাদের হুইসেল দুর্নীতির ভিত্তিমূল নাড়িয়ে দিতে পারে। আমাদের একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতি আছে। আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা কমবেশি আপনারা সবাই জানেন। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দুদকের নিত্যদিনের কাজ নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যম যেভাবে কভারেজ দিচ্ছে তা প্রমাণ করছে সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ও ডেলিভারি প্রদান সক্ষম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে দুদক। আমাদের নতুন কমিশন মাত্র ৭৫ কর্মদিবস পেরিয়ে এসেছি। শততম কর্মদিবস অতিক্রান্ত হলে আপনারাই বিবেচনা করবেন ৫ আগস্টের নব অভ্যুদয়ের পর বহুবিধ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও একটি প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে দুদক।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হয়ে ব্যাংককে বঙ্গোপসাগরীয় বহুমুখী আর্থিক ও প্রযুক্তিগত উদ্যোগ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সম্মান আমরা লাভ করেছি। সেখানে থাইল্যান্ডের জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে Bilateral Co-operation on Preventing and Fighting Corruption সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। সমঝোতা স্মারকে বর্ণিত নানা সহযোগিতা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উভয় দেশকে সক্ষম ও শক্তিশালী করে তুলবে।
তিনি বলেন, আমাকে থাইল্যান্ডের সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছেন, মোমেন কমিশনের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী? আমি বলেছি, দুদক এখনো সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান না হলেও আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি। আমরা বিশ্বাস করি এ ধারাটি অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত, গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারে সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ৮টি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দাখিল করে দুদক। এর মধ্যে শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিককে তিন মামলায় আসামি করা হয়েছে।
চার্জশিটে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের রূপান্তরিত নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের অভিযোগ আনা হয়।
আ. দৈ./কাশেম