আগামীকাল শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন । এ প্রতিনিধি দলে থাকছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ও ইউএসএইডের এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর। এর মধ্যে ডোনাল্ড লু ও অঞ্জলি কৌর দিল্লীতে অবস্থান করছে। সেখান থেকে তারা ঢাকায় পেওছাবেন। বাকীরা ওয়াশিংটন থেকে ঢাকায় পৌছাবেন বলে জানা গেছে।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লু এখন ভারতে অবস্থান করছেন। সেখানে ওয়াশিংটন-দিল্লি প্রতিরক্ষাবিষয়ক ইন্টারসেশনাল সংলাপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন লু। তারপর প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় আসবে শনিবার। ১৬ সেপ্টেম্বর তাদের ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। ঢাকায় অবস ্থানকালে তারা অন্তর্বতীী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ ও পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
ঢাকা-দিল্লি এবং ওয়াশিংটনের উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ঢাকায় গত ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের চাহিদাগুলো জানতে চাইবে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে বিষয়গুলোতে সামনের দিকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় তা নিয়েও আলোচনা হবে।
এদিকে মার্কিন প্রতিনিধিদলের ঢাকায় আসার বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের লেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছে এটা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র যে গুরুত্ব দেয়, তার একটা বড় প্রতিফলন। বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তাই বাংলাদেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের চাহিদাগুলো জানতে চাইবে ওয়াশিংটন।
এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর পাশাপাশি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। এতে ঢাকাকে বিরক্ত না করার জন্য ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দিল্লিকে বার্তা দেওয়া হবে।
এদিওকে জানা গেছে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হবে আজও আগামীকাল। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ি বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হতে সহায়তা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সে লক্ষ্যেই এই আলোচনা।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এটাই হবে প্রথম উচ্চপর্যায়ের আলোচনা। অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসও এই আলোচনায় অংশ নেবেন। মার্কিন প্রতিনিধিদলে দেশটির অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের কর্মকর্তারা থাকবেন।
সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ একসময় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে তারকা দেশ ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি গতি হারিয়ে ফেলে। জ্বালানিসহ আমদানি পণ্যের ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে দেশটি ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দ্বারস্থ হয়। ধারণা করা হচ্ছে, রাজস্ব ও মুদ্রানীতি নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে আলোচনা হবে স্বাস্থ্য ও আর্থিক ব্যবস্থা নিয়েও। সরকারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দুর্বলতা মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা ও ভবিষ্যতে অধিকতর সমৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করতে পারবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী। আইএমএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পৃক্ততা, যুক্তরাষ্ট্র তাতে সমর্থন দেবে। আর্থিক খাতের গভীর সংস্কার, দুর্নীতি হ্রাস ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চায়, তার প্রতিও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে।
আ. দৈ. /কাশেম/ শাহীন