শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন সরকারের আমলে সংঘটিত প্রায় ১০ বছর আগের দেশ বিদেশে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলাটি এবার অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের নিয়োগকৃত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
একই সাথে দুদকের দায়ের করা আগের মামলায় অভিযুক্ত ওই সময়ে সেতু বিভাগের সাবেক সচিব, প্রধান প্রকৌশলী ও এসএনসি-লাভালিনসহ ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত করবে দুদক। ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেয় দুদক। যা ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালত গ্রহণ করে। দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মীর্জা জাহিদুল আলমের নেতৃত্বাধীন একটি টিম এ মামলাটি তদন্ত করেছিল।
এদিকে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তটি গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসব্রিফিং এ জানিয়েছেন মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
দুদকের মুখপাত্র মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত দরপত্রের অন্যতম দরদাতা এসএনসি-লাভালিন ইন্টারন্যাশনাল ইনক-কে কার্যাদেশ পাইয়ে দেওয়ার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রেও অভিযোগে ডিএমপির বনানী থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। এই বিষয়টি নিয়ে ওই সময় দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোচান ও সমালোচনা চলতে থাকে।
দুদকের পক্ষ থেকে দুই দফায় প্রতিনিধি কানাডায় সফল করেন এবং কানাডিয়ান আদালতের দারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময় অনেক গল্প রচনা করা হয়েছিল। পরে রহস্যজনক কারণে ২০১৪ সালে আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদনে এফআরটি দাখিল করা হয়। ষড়যন্ত্রেও মামলাটিই নাকি ষড়যন্ত্র ছিল। টানা ১০ বছর পরে ওই মামলা পুনঃপর্যালোচনা করে কমিশন মামলাটি অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় (মামলা নং ১৯) মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, তৎকালীন সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেইন ভূঁইয়া, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সাবেক সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইপিসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, কানাডীয় প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল।
পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলার এজাহারে সন্দেহভাজনের তালিকায় ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। মামলাটির এফআরটির মাধ্যমে তারাও এ অভিযোগ থেকে রেহাই পান। ওই মামলার এফআরটির বিষয়ে তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান গণমাধ্যমকে জানিয়ে ছিলেন, ওই মামলাটি ছিল দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলা। তদন্তে আরও তথ্য পাওয়ার আশায় আমরা মামলা দায়ের করি।
তদন্তকালে দেশে এবং কানাডায় গিয়ে দুদকের তদন্ত দল অভিযান চালায়। দুদক টিম কানাডা গিয়ে কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করে। বিশ্বব্যাংকের আশ্বাসের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হলেও মামলা প্রমাণের জন্য দাতা সংস্থা ও কানাডা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির (এফআরটি) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার দেখা যাক দুদকের অধিকতর তদন্তে কি বেরিয়ে আসে।
আ. দৈ./ কাশেম